পৃষ্ঠাসমূহ

বাঙালীর আহারে মাছ (Fish in Bengali's diet)

সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)

মাছে -ভাতে বাঙালী। খাদ্য নির্বাচনের সূত্র মেনেই জলবহুল বাংলায় অনাদিকাল থেকেই মাছ বাঙালীর খাদ্য হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছে। মাছ চিরকালই বাঙালির রসনাকে তৃপ্ত করার পাশাপাশি পুষ্টি প্রদান করে এসেছে।



চন্ডীমঙ্গল কাব্যে উল্লেখ রয়েছে,

কটু তৈলে রান্ধে বামা চিথলের কোল

বুহিতে কুমুড়া বড়ি আলু দিয়া ঝোল।

--------------------------------------------

কটু তৈলে কই মৎস্য ভাজে গন্ডা দশ

মুঠে নিঙ্গড়িয়া তথ্য দিল আদারস।

-------------------------------------------

কথোগুলি তোলে রামা চিঙ্গড়ির বড়া

ছোট ছোট গোটা চাবি ভাজিল কুমুড়া।

আবার চন্ডীমঙ্গল কাব্যের অপর এক স্থানে পাই,

ঘৃতে ভাজে পলাকড়ি                 নট্যা সাকে ফুলবড়ি

চিঙ্গড়ি কাঁঠাল বিচি দিয়া

ঘড়িতে নলিতার শাক                  কটু তৈলে বাথুয়া পাক

খন্ডে পেলে ফুলবড়ি ভাজিয়া।

-------------------------------------

ভাজা চিতলের কোল                  কাতলা মাছের ঝোল

মান বড়ি মরিচ ভূষিত।

পশ্চিম বাংলায় ২৩৯ প্রজাতির মিষ্টিজলের মাছ রয়েছে (Barman 2007) তবে এদের মধ্যে এমন কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে যারা সামুদ্রিক বা খাড়ির মাছ হলেও মিষ্টিজলে কিছুটা জীবন অতিবাহিত করতে আসে। যেমন ইলিশ, এরা মিষ্টি জলে আসে ডিম পাড়তে। আবার কয়েকটি প্রজাতির মাছকে অন্য ভৌগোলিক স্থান থেকে পশ্চিম বাংলায় আনা হয়েছে যেমন গ্রাস কার্প (Ctenopharyngodon idella), তেলাপিয়া (Oreochromis mossambicus, O. niloticus), সিলভার কার্প (Hypophthalmichthys molitrix), কমন কার্প (Cyprinus carpio carpio) ইত্যাদি। সবগুলিকে নিখুঁতভাবে চিহ্নিতকরণ সাধারণ মানুষের পক্ষে সকল সময়ে সম্ভব হয় না। যেমন Mystus menoda এবং M. tengara দুটিই ট্যাংরা বলে পরিচিত, আবার যেমন পুঁটি, কাঞ্চন পুঁটি, স্বর্ণ পুঁটি, তিত পুঁটি, গিল্লি পুঁটি সবই পুঁটি।

 

Category

বাংলা নাম

বিজ্ঞানসম্মত নাম

কার্প

রুই

Labeo rohita

কাতলা

Catla buchanani, C. catla

মৃগেল

Cirrhinus mrigala

কালবোস

Labeo calbasu

বার্ব

পুঁটি 

Puntius sophore

কাঞ্চন পুঁটি

Puntius conchonius

স্বর্ণ পুঁটি

Puntius sarana

তিত পুঁটি

Puntius ticto

গিল্লি পুঁটি

Puntius gelius

ক্যাটফিশ

পাবদা

Ompok pabda, O. bimaculatus, O. pabo

ট্যাংরা

Mystus menoda, M. tengara

গোলশা-ট্যাংরা

Mystus cavasius

শিঙ্গি

Heteropneustes fossilis

আড়

Osteogeneiosus militaris

বোয়ারি

Wallagonia attu

মাগুর

Clarias batrachus

পাঙ্গাস

Pangasius pangasius

গাগলা

Arius sp.

কান-মাগুর

Plotosus canius

হেরিং এবং শাদ

ইলিশ

Tenualosa ilisha or Hilsa lisha

ধলা

Ilishi clongate

খয়রা

Gonialosa manmina

ফেদারব্যাক

চিতল

Chitala chitala

ফলুই

Notopterus notopterus

জিয়ল

কই

Anabas cobojius, A. testudineus

পার্চ

ভেটকি

Lates calcarifer

ব্রিম

গুজ্জালী

Polynemus sp.

তোপসে

Polynemus paradiseus

ক্রকার্স

ভোলা

Barilius barna

গ্রে-মুলেট

পার্শে

Liza parsia

খারসুল/খরসুল

Mugil corsula

স্ক্যাবার্ড

রূপা পাইত্যা/ রূপা পাতিয়া

Trichiurus pantilui

পমফ্রেট

চাঁদা

Pseudambassis baculis, P. ranga

মুরেল

শোল

Channa striata

চিংড়ি*

গলদা চিংড়ি

Palaemon sp.

চিংড়ি

Penaeus carinatus, P. indicus

     * চিংড়ি মাছ নয়, এটি Arthropod পর্বভুক্ত

এছাড়াও রয়েছে মৌরলা (Amblypharyngodon microlepis, A. mola), বানলোটে (Bombay duck: Harpadon nehereus), আমুদি, বিভিন্ন ধরনের ট্যাংরা ইত্যাদি মাছ। চুনো মাছ বলে অনেকগুলি ছোট ছোট মাছ একসাথে কখনও বিক্রী হয় বাজারগুলিতে। পুষ্টিগত দিক থেকে এই সকল চুনো মাছগুলির পুষ্টিগুণ কিন্তু অপরিসীম। মাছ প্রোটিনের পাশাপাশি অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড ধারণ করে। প্রাণী থেকে প্রাপ্ত প্রোটিনের ১২.৮% আসে মাছ থেকে (Barik, 2017) মাছ খাওয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে দেখা যায় আমাদের দেশে ক্যাপিটা প্রতি মাছ খাওয়ার পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি খুবই আশাব্যঞ্জক। এরফলে পুষ্টিসাধনের উপায় যেমন বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে তেমনই জৈববৈচিত্রের উপর লক্ষ্য রাখা সম্ভব হবে (সাস্টেনেবল মাছ চাষ বা মাছ ধরার মাধ্যমে)

বর্মন (২০০৭)-র তথ্য অনুযায়ী ৫৯ টি মাছের প্রজাতি পশ্চিমবঙ্গে threatened যাদের মধ্যে ২২ টি প্রজাতি endangered এবং ৩৭টি vulnerable।  মাছের বাজারে গেলেই দেখা যায় কয়েকটি প্রজাতির মাছের আধিক্য থাকলেও অনেক মাছ আজকে প্রায় অমিল বা কম পাওয়া যায়। যেমন ট্যাপা (Tetraodon cutcutia), খয়রা (Gonialosa manmina), কাজুলি (Ailia coila), বাচা (Eutropiichthys vacha), মুড়ি বাচা (Eutropiichthys murius) ইত্যাদি খুব একটা চোখে পড়ে না। অন্যদিকে রুই, কাতলা, ভোলা ভেটকি, চিংড়ি,বর্ষায় ইলিশ, ইত্যাদির চাহিদা বেশ বেশি, কাজেই দামও বেশ বেশির দিকেই থাকে। খাদ্য তালিকায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রাখুন সকল প্রকার মাছ। স্বাদের বৈচিত্রের পাশাপাশি জীব বৈচিত্রের ভারসাম্য বজায় থাকবে। 


তথ্য সূত্র (References)

Barik, N.K. 2017. Freshwater fish for nutrition security in India: Evidence from FAO data. Aquaculture Reports 7: 106. https://doi.org/10.1016/j.aqrep.2017.04.001

Barman, R.P. 2007. A review of the freshwater fish fauna of West Bengal, India with suggestions for conservation of the threatened and endemic species. Records of Zoological Survey of India. Occasional paper no. 263, 1-48. 



রাজমহল: পর্ব-২ (Rajmahal: Part-2)

সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)  রাজমহল: পর্ব-১  -র পর- ঘুম ভাঙলো প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের শব্দে। বাইরে তখন খুবই কুয়াশা, হোটেলের ঘরের কাঁচের ...