সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)
আনদং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইয়ংদেওক বা ইয়ংদক
(Yeongdeok, South Korea) সমুদ্র সৈকতের দূরত্ব ৫৫-৬০ কিলোমিটারের মতন, সময় লাগে ঘন্টা খানেক। অপূর্ব সুন্দর সৈকতের পাশাপাশি ইয়ংদক
বিখ্যাত তার মৎস বন্দর আর বিশেষত কাঁকড়ার জন্যে। পর্বতের পাদদেশ এখানে এসে মিশেছে সাগরে। গাড়ি থেকে নামতেই রেস্তোরাঁর
বাইরে কর্মীরা আমন্ত্রণ জানাবেন তাঁদের রেস্তোরাঁতে খেতে
যেতে। এ আমার দেশ ভারতবর্ষেও খুব পরিচিত এক ছবি, যে কোনো পর্যটন স্থানেই এক সুপরিচিত
চিত্র। গোরীয় সাম্রাজ্যের সময় থেকেই ইয়ংদেওক মৎস্যজীবীদের গ্রাম হিসেবে বিশেষ পরিচিতি লাভ করে, আর আজ গাঙ্গুয়ান বন্দরকে কেন্দ্র করে কাঁকড়া
এবং অন্যান্য খাদ্য হিসেবে পরিচিত সামুদ্রিক জীব বিক্রীর প্রায় শতাধিক দোকান, রেস্তোরাঁ, হোটেল গড়ে উঠে ইয়ংদক এক অন্যতম পর্যটন স্থান হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে। বিভিন্ন ধরণের কাঁকড়ার মধ্যে কিং ক্র্যাব (King crab), স্নো ক্র্যাব (Snow crab), নীল কাঁকড়া (Blue crab), লাল কাঁকড়া (Red crab)
উল্লেখযোগ্য। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে কিং ক্র্যাব লম্বায় প্রায় ২২ সেন্টিমিটার এবং
চওড়ায় প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। এক একটির ওজন প্রায় ৭-৭.৫ কিলোগ্রামও হয়ে থাকে। আকারের দিক থেকে এর পর রয়েছে স্নো ক্র্যাব, পুরুষ স্নো ক্র্যাব লম্বায়
প্রায় ১৭-১৮ সেন্টিমিটার এবং স্ত্রী স্নো ক্র্যাব প্রায় ১১ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে।
স্থানীয় অধিবাসীরা নীল কাঁকড়াকে 'নদো দেগে' (너도대게) বলে থাকেন। সাধারণত কাঁকড়ার পুষ্টিগুণ উন্নত, এর প্রোটিন মাত্রা বেশ বেশি।
কেবলমাত্র কাঁকড়া খাদ্য হিসেবে-ই উপাদেয় নয়, এর একটি গুরুত্বপূর্ণ
উপজাত বস্তু হলো কাইটোসান (Chitosan) যা
স্বাস্থ্য পরিপূরক, পশুখাদ্য, সার, বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল
হিসেবে এমনকি চিকিৎসাবিজ্ঞানে কাজে লাগে। বাজারটিতে চোখ টানবে বিরাটাকার লবস্টারও (Lobster)।
ফুটপাথের ধারে অনেক ছোট ছোট
শুকনো মাছের স্টল রয়েছে, সেখানে নানান শুকনো মাছের সাথে রয়েছে শুকনো স্কুইড (Squid), অক্টোপাস (Octopus)
ইত্যাদি। রাস্তার ধরেই তারজালির স্ট্যান্ডে চলেছে মাছ শুকোনোর প্রক্রিয়া, সারিবদ্ধ ভাবে ঝোলান রয়েছে স্কুইডগুলি।
ভারতবর্ষে আমি শুঁটকি মাছ তৈরির প্রক্রিয়া দেখেছি, তা সাধারণত বাঁশের মাচা তৈরী করে তার উপরে শুকানো হয়। আবার দড়িতে টাঙিয়েও শুকানো হয় বেশ কিছু সময়ে। পশ্চিমবাংলায়
তাজপুরে (Tajpur (West Bengal),
India) দেখেছি আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত শুঁটকি মাছ প্রস্তুত করার
কাজ হয়ে থাকে। শুঁটকির মধ্যে সেখানে প্রধানত
দেখেছিলাম বুমলা, রুপা পাইত্যা, চিংড়ি, কাঁকড়া ইত্যাদি।
আর্থ্রোপোডা (Arthropoda/সন্ধিপদ) এবং মোলাস্কা (Mollusca/কম্বোজ) পর্বভুক্ত প্রাণী ছাড়াও আরও দুটি প্রাণী এখানে উল্লেখযোগ্য ভাবে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ
করেছিল। প্রথমটি সি-পাইনআপেল (Sea pineapple) নামে পরিচিত, এটি কর্ডাটা (Chordata) পর্বভুক্ত আর অপরটি এনেলিডা (Annelida/অঙ্গুরীমাল) পর্বভুক্ত ‘ফ্যাট ইনকিপার ওয়ার্ম’ (Fat
innkeeper worm)। ‘সি-পাইনআপেল’ প্রধানত ভিনেগার সস-র সাথে পরিবেশন করা হয় যার স্থানীয় নাম 'মিয়ং-গে' (Meong(Mung)-gae)। অপরপক্ষে ‘ফ্যাট ইনকিপার ওয়ার্ম’ (Fat
Innkeeper worm) যা স্থানীয় 'গে-বুল' (Gae-bul) নামে পরিচিত, সাধারণত লবণ
ও তিলের তেল সহযোগে পরিবেশিত হয়।
সামুদ্রিক খাদ্যভান্ডারের পাশাপাশি ইয়ংদকে রয়েছে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের
সুযোগ যেমন নৌকায় করে মাছ ধরা, ডাইভিং, কায়াকে বা প্যাডলিং বোটে করে ঘোরার সুযোগ, যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলির আয়োজন
কেবলমাত্র সপ্তাহান্তে হয়ে থাকে। এবার ফেরার পালা।






কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন