পৃষ্ঠাসমূহ

দক্ষিণ কোরিয়ার ফরেস্ট অ্যালবাম (South Korean Forest Album)

সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)


পূর্বের ব্লগটিতে আমি বিভিন্ন প্রকার ফরেস্ট বা জঙ্গলের বর্ণনা করেছি। এই ব্লগটিতে আমি দক্ষিণ কোরিয়ার ফরেস্টের কয়েকটি ছবি দিলাম, বছরের বিভিন্ন সময় টেম্পারেট ফরেস্টের বিভিন্ন রূপ। দেশটি টেম্পারেট অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় জঙ্গলের বৈশিষ্ট্যও অনুরূপ। কর্মোপলক্ষ্যে বিভিন্ন এক্সকারসনের সময় বা অবসরে আমি ছবিগুলি তুলেছি। এই জঙ্গলের গাছগুলি বেশিরভাগই পর্ণমোচী এবং কনিফেরাস বৃক্ষের। শীতকালে সব পাতা  ঝরে গিয়ে একেবারে রুক্ষ ও শুষ্ক রূপ ধারণ করে, আবার বসন্তে নতুন কচি পাতা ধরে ও ধীরে ধীরে পূর্ণ হয়ে ওঠে।  তখন এর আরেক রূপ।

নামওন (Namwon-si) শহরের অনতিদূরে  তোলা জঙ্গলের ছবি (জুলাই, ২০২০)। জঙ্গলের দৃশ্য গ্রীষ্মে একেবারেই আলাদা। ঘন সবুজ জঙ্গল। 


নামওন (Namwon-si) শহরের অনতিদূরে অবস্থিত ছোনানজেসুজি রিজার্ভার-র (Cheonunjeosuji Reservoir) সামনে তোলা ছবিটি (জুলাই, ২০২০)। বর্ষাতে জঙ্গলের দৃশ্য এইরকম ঘন সবুজ থাকে।


জেজু দ্বীপের (Jeju island) হালাসান (Halasan mountain) পর্বতে তোলা ছবি (জুন, ২০১৬)। দক্ষিণ কোরিয়ার একেবারে দক্ষিণে অবস্থিত এই দ্বীপটির কিন্তু আর্দ্র সাব ট্রপিক্যাল (Humid sub tropical region) অঞ্চলের অন্তর্গত।


পিয়ংচান-এ (Pyeongchang) তোলা এই ছবি (অক্টোবর, ২০১৯)। শরৎ কাল, শীতের প্রারম্ভ। পাতাগুলি রঙিন হয়ে উঠছে, পর্ণমোচীদের পাতাগুলি ধীরে ধীরে আর্দ্রতা হারাবে। টেম্পারেট অঞ্চলে চারটি ঋতু যথা গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত, এবং বসন্ত খুব পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায়। তবে বর্ষার শেষে, বৃষ্টি হচ্ছে না, বাতাসে আর্দ্রতা কমছে, এবং হালকা একটা শীতের আমেজ রয়েছে কিন্তু পুরোপুরি শীত পড়েনি, এমন একটা সময় শরৎ এসেছে বলে বোঝা যায়। এই সময় তাপমাত্রা থাকে ৫ থেকে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে, এটা আমাদের পশ্চিমবঙ্গে শীত বলে বিবেচিত হলেও এখানে শীত বলে মনে হয়না, শীতে এখানে তাপমাত্রা ০ ডিগ্রীর থেকে বেশ কিছুটা নেমে যায়।



আনদং মাস্ক মিউজিয়াম (Andong Mask Museum) থেকে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ট্রেক করে হাওয়ে গ্রামে বিয়ংসান সুয়োন কনফুসিয়াস একাডেমি-র (Byeongsanseowon Confucian Academy) পথে তোলা এই ছবি (জানুয়ারী, ২০১৮)। শীতে গাছের সকল পাতা ঝরে গিয়ে প্রায় ন্যাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাকি যে পাতাগুলি রয়েছে সেগুলিও শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় আর্দ্রতা হারিয়ে শুকনো হয়ে গেছে। 



আনদং বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনে যে জঙ্গল রয়েছে সেখানে তোলা ছবি (ডিসেম্বর, ২০১৭)। জঙ্গল এখন পুরোই বরফে ঢাকা, সাদা।

সোবেকসানের (Sobaeksan) ট্রেকিং পথে তোলা ছবি (ডিসেম্বর, ২০১৯)। বরফের পুরু চাদরে আচ্ছাদিত হয়ে রয়েছে পুরো পথটাই। ল্যান্ডস্কেপটি এখন সাদা-কালো।

শীতকালের শেষে আসে বসন্ত। চারিদিকে গাছগুলি আবার নব সবুজ পাতায় ভোরে ওঠে। প্রকৃতি সেজে ওঠে ফুলে, রঙে। মৌমাছিরা চাক থেকে বেরিয়ে আসে, আবার শুরু করে ফুলে ফুলে ঘুরে মধু সংগ্রহ, পরাগ মিলন হয় তার ফলে। সে বিষয়ে পরে কোনো ব্লগে লিখবো।

নিচের ফোটোটির বাম পাশে যে চেরী ব্লসমের ছবি সেটি ২০২০ সালের এপ্রিলে তোলা এবং ডান পাশের রবিনিয়ার (বা সিউডোএকাশিয়া) ছবি সেটি ওই বছরের মে মাসে তোলা।


এগুলি এপ্রিল (২০২০, ২০২২) ও মে (২০২১, মাঝের ছবিটি) মাসের তোলা বিভিন্ন ফুলের ছবি। আমাদের ক্যাম্পাসের আসে পাশে থেকে এই ছবিগুলি তুলেছি।

উপরের সারির ফুলের ছবি গুলি এপ্রিল মাসে (২০২০) তোলা আর নিচের সারির ফুলের ছবিগুলি জুন মাসে তোলা (২০১৮)।


আশা করি গত পর্বের জঙ্গলের বৃত্তান্ত পড়ার পর এই ছবিগুলির মাধ্যমে টেম্পারেট ফরেস্টের অনেকটা দৃশ্যায়িত হবে। আপনি যদি আমাদের দেশে কাশ্মীর, উত্তরাঞ্চল, হিমাচল প্রদেশ, সিকিম বা পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং বেড়াতে যান, তবে পাইন, দেবদারু, সিডার, ওক, লরেল, রোডোডেনড্রনের টেম্পারেট ফরেস্ট উপভোগ করতে পারেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

রাজমহল: পর্ব-২ (Rajmahal: Part-2)

সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)  রাজমহল: পর্ব-১  -র পর- ঘুম ভাঙলো প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের শব্দে। বাইরে তখন খুবই কুয়াশা, হোটেলের ঘরের কাঁচের ...