পৃষ্ঠাসমূহ

বাস্তুতন্ত্র-ভিত্তিক-অভিযোজন এবং খাদ্য নিরাপত্তা (Ecosystem-based-Adaptation and Food Security)

সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)

পূর্বের একটি ব্লগে আমি (বাস্তুতন্ত্রের সেবা প্রদান এবং খাদ্য) বাস্তুতন্ত্র কিরূপে আমাদের খাদ্য সংস্থান বিষয়ে পরিষেবা প্রদান করে সেই সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছি। এই ব্লগটিতে বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে খাদ্য সংকট উৎপন্ন হচ্ছে তার মোকাবিলা বাস্তুতন্ত্রের উপর নির্ভর করে কিরূপে করা সম্ভব তার উপর আলোচনা করবো। 

বর্তমান পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তন এবং তারফলে উত্থিত সমস্যাগুলিকে মোকাবিলা করা একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ। এই সমস্যাগুলির অন্যতম সমস্যা হলো খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়া। এখন প্রথম প্রশ্ন জলবায়ু পরিবর্তন কেন হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর হলো, অনিয়ন্ত্রিত শিল্পায়ন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, বনভূমি হ্রাসপ্রাপ্ত হওয়া, জলাশয়গুলি বুজিয়ে ফেলা, প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত শোষণ (Overexploitation), স্ট্রিপ মাইনিং, ফ্র্যাকিং ইত্যাদি। এই সকল কারণের ফলে আজ আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। পরবর্তী প্রশ্ন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কি হচ্ছে ? এর ফলে (১) তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে (Increasing temperature), (২) বৃষ্টিপাতের ধরণে পরিবর্তন আসছে (Changing precipitation pattern), (৩) চরম আবহাওয়া জনিত ঘটনাগুলির তীব্রতা এবং সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে (Increasing intensity and frequency of extreme weather events), (৪) জলবায়ুর পরিবর্তনশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে যা অনেকটাই অপ্রত্যাশিত (Increasing unanticipated climate variability)। এই যে পরিবর্তন এর প্রভাব কিন্তু আমাদের জীবনের সর্বত্র পড়ছে। আজ এই ব্লগটিতে আমরা আলোচনা করবো খাদ্য নিরাপত্তার উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কি এবং কিরূপে তার মোকাবিলা করা যায়।  

প্রথমেই উল্লেখ করেছি তাপমাত্রা বৃদ্ধির কথা। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাব্য ফলগুলি হলো ফসলের ফলন কমে যাওয়া, গবাদিপশুর মধ্যে হিট স্ট্রেস, পরাগসংযোগকারী কীট পতঙ্গের ব্যাঘাত ঘটা, ক্ষতিকারক পেস্টের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া, ফসল ও গবাদি পশুর রোগ বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে কিন্তু আবার জলস্তরও বৃদ্ধি পাচ্ছে, কাজেই পৃথিবীর অনেক অঞ্চল আজ জলের তলায় নিমজ্জিত হচ্ছে বা অদূরেই হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। এবার বৃষ্টিপাতের ধরণ পরিবর্তনের ফলে কি কি হচ্ছে, তার দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, প্রায়ই বিভিন্ন স্থানে অতিবৃষ্টির কথা শুনছি, কখনো অতিবৃষ্টি আর তার ফলে বন্যা তো আবার কখনো অনাবৃষ্টি তথা খরা সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমান পৃথিবীর অধিকাংশ স্থানের কৃষিব্যবস্থা কিন্তু বৃষ্টিনির্ভর (Rainfed agriculture), এখন এই বৃষ্টিপাত যদি সঠিক সময়ে এবং সঠিক পরিমানে না হয় তবে তা যে কৃষিকাজ এবং অবশ্যই ফলনে ঋণাত্মক প্রভাব ফেলবে তা বলাই বাহুল্য। পূর্বের তুলনায় চরম আবহাওয়া জনিত ঘটনাগুলির তীব্রতা এবং সংখ্যা বৃদ্ধি প্রতি বছরই চোখে পড়ছে। আর এর ফলে মানুষ ঘরবাড়ি, চাষজমি, গবাদিপশু সবই হারাচ্ছে।  এখানে একটি কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন বলে আমার মনে হয়। এই যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বিপদ (Natural hazard) সেগুলি যে বর্তমানে প্রায়ই বিপর্যয়ে (Disaster) পরিণত হচ্ছে তার পিছনেও কিন্তু আমাদের অপরিকল্পিত এবংঅনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাগুলিই দায়ী, যেগুলির উল্লেখ আমি জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছি। এই পরিবর্তনগুলির ধরণ এতটাই অপ্রত্যাশিত হয়ে পড়ছে যে তা আগে থেকে অনুধাবন করা বা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্ভব হচ্ছে না। আশা করি বোঝা গেলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের খাদ্যে তা কি মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করেছে বা ভবিষ্যতে আরও বেশি করতে চলেছে। কাজেই সচেতনতার প্রয়োজনই যে শুধু রয়েছে তাই নয়, উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার সময় এসে গেছে। 

এই ব্যবস্থাগুলি কিরূপ বা প্রশ্ন করা ভালো, এই ব্যবস্থাগুলির ভিত্তি কি? এর ভিত্তি হলো প্রকৃতির ধারণক্ষমতার (Sustainability) উপর সর্বাগ্রে গুরুত্ব আরোপ করা। অর্থাৎ এমন ব্যবস্থা প্রয়োজন যা খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করার পাশাপাশি প্রকৃতির ধারণক্ষমতাকেও বিপর্যস্ত করবে না। যেমন ধরো, বনভূমি ধ্বংস করে কৃষিজমি প্রস্তুত হবে না, এমন কৃষিব্যবস্থা যাকে আমরা নিবিড় কৃষি (Intensive agriculture) বলে অভিহিত করে থাকি যা ফলন বা ফসলের উৎপাদনশীলতাকে (Yield) সর্বাধিক গুরুত্ব দেয় এরূপ ব্যবস্থার থেকে সাস্টেনেবল কৃষিব্যবস্থার (Sustainable agriculture) উপর বিশেষ জোর দেওয়া হবে, ফসলের স্থানীয় ভ্যারাইটিগুলিকে (Local variety) সংরক্ষণ করা ইত্যাদি। এই প্রকার ব্যবস্থাগুলিকে কিরূপে প্রয়োগ করা যেতে পারে, সেই বিষয়ে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় বাস্তুতন্ত্র ভিত্তিক অভিযোজন (Ecosystem-based-adaptation/EbA) খুবই উপযোগী। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে মানুষকে সাহায্য করার জন্য একটি সামগ্রিক অভিযোজন কৌশলের অংশ হিসাবে জীববৈচিত্র্য এবং বাস্তুতন্ত্র পরিষেবার (পড়ুন বাস্তুতন্ত্রের সেবা প্রদান এবং খাদ্য) ব্যবহার হলো EbA-র মূল ভিত্তি।


এস্থানে EbA-র কয়েকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।       

উদাহরণ ১

যেমন ধরো, কোনো অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই হ্রাস পেয়েছে এর ফলে ওই অঞ্চলের যদি বা জলাশয়গুলিতে জলের পরিমাণ বৎসরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হচ্ছে, এবং এই পরিমাণের পার্থক্য খুবই বেশি হচ্ছে। আগে যেখানে সারা বৎসর মোটামুটি জল থাকতো এবং এর উপর ভিত্তি করে মানুষের জীবন-জীবিকা গড়ে উঠেছিল এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। এর মধ্যে আবার ওই অঞ্চলের জমি ব্যবহারের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, পাহাড়ের ঢালগুলি ধীরে ধীরে ভ্রান্ত জমি ব্যবহারের (Inappropriate land management practice) ফলে ধীরে ধীরে অবনমিত (Degradation) হয়ে গেছে, প্রচুর পরিমানে বনাঞ্চল ধ্বংস এবং তার ফলে ভূমিক্ষয় (Soil erosion) এর পিছনে দায়ী। এর মধ্যে আবার ওই অঞ্চলের জমি ব্যবহারের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, পাহাড়ের ঢালগুলি ধীরে ধীরে ভ্রান্ত জমি ব্যবহারের (Inappropriate land management practice) ফলে ধীরে ধীরে অবনমিত (Degradation) হয়ে গেছে, প্রচুর পরিমানে বনাঞ্চল ধ্বংস এবং তার ফলে ভূমিক্ষয় (Soil erosion) এর পিছনে দায়ী। আবার জনসংখ্যাও দিনকে দিন বৃদ্ধি পেয়েছে, তার একটা চাপ প্রকৃতির উপরে পড়েছে। অপরিকল্পিত ভাবে বসতি অঞ্চল গড়ে উঠায় প্রাকৃতিক সম্পদের উপর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে, যথেচ্ছ জলের ব্যবহার হচ্ছে, বন কেটে বসতি জমি গড়ে উঠছে ইত্যাদি। স্বাভাবিকভাবেই ওই অঞ্চল বসবাস অযোগ্য হয়ে উঠছে। বর্ষাকালের সময় অতিবৃষ্টির কারণে প্রায়ই বন্যা হয়, আশপাশের সব ঘর বাড়ি, গবাদি পশু, চাষজমি সব ভাসিয়ে দেয়, তারপর কিছুদিন পর থেকে বৎসরের বাকি সময়ে আর বৃষ্টির দেখা পাওয়া যায় না, ধীরে ধীরে জলাশয়গুলো শুকোতে থাকে। চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জল পাওয়া যায় না, পাম্প লাগিয়ে ভূগর্ভস্থ জল তুলে তা ব্যবহার করতে হয়, আগে ১০ মিনিট পাম্প চালিয়ে যতটা জল তোলা যেত এখন সেই পরিমান জল তুলতে প্রায় আধ ঘন্টা লাগে। আগে মাছ ধরে যে সকল মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করতো তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কাজেই জীবিকাতে একটা পরিবর্তন হয়েছে, কৃষিকাজ ছেড়ে অনেকেই বড়ো শহরে চলে যাচ্ছেন অন্য কর্মসন্ধানে। পূর্বে যারা মৎস্যজীবি ছিলেন তাঁরাও এখন এই পথই অনুসরণ করতে বাধ্য হচ্ছেন।  স্বাভাবিকভাবেই ওই অঞ্চল বসবাস অযোগ্য হয়ে উঠছে। এবার উপায় ? 

উপায় একটা হলো, ওই অঞ্চলের যে সকল কৃষক ছিলেন, তাঁরা এগিয়ে এলেন। প্রথমেই পাহাড়ের ঢালগুলিতে বৃক্ষ রোপণ করা হলো। গাছগুলির মধ্যে স্থানীয় গাছের প্রজাতিগুলিকে প্রাধান্য দেওয়া হলো। ধীরে ধীরে এগ্রোফরেস্ট্রি সিস্টেম (Agroforestry system) গড়ে তুললেন, ফসলের সাথে সাথে বৃক্ষ রোপণের অনুশীলনের মাধ্যমে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পেলো, জল ধারণ ক্ষমতা বাড়লো,এর প্রভাব ফলনের উপর পড়লো, ফলন বৃদ্ধি পেলো। আর ওই যে পাহাড়ের ঢাল গুলিতে পুনর্বনায়নের (Reforestation) মাধ্যমে ভূমিক্ষয় তো রোধ হয়েই ছিল, এখন অতিবৃষ্টিতে সহজেই ধ্বস নেমে প্রাকৃতিক বিপদ বিপর্যয়ে পরিণত হয় না। তারপর তাঁরা বৃষ্টির জল ধরে রাখার ব্যবস্থা করলেন, ফলে ভূগর্ভস্থ জলের প্রয়োজনীয়তা কমল। এই যে স্থানীয় মানুষ নিজেদের সহায়তায় বাস্তুতন্ত্রের পরিষেবা কে ব্যবহার করে আনসাস্টেনেবল অবস্থা থেকে একটা সাস্টেনেবল অবস্থায় ফিরিয়ে আনলেন, এবং ক্ষয়প্রাপ্ত একটি অঞ্চলকে পুনর্জীবন প্রদান করলেন, এই ব্যবস্থাটাই হলো বাস্তুতন্ত্র ভিত্তিক অভিযোজন।     

উদাহরণ ২

আবার ধরো, একটি ম্যানগ্রোভ অঞ্চল। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, যথেচ্ছ বন কেটে ফেলে বাসভূমি গড়ে তোলা হয়েছে। সম্প্রতি বেশ কয়েক বৎসরে ধরে প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে, পূর্বে পাঁচ দশ বৎসরে একটা প্রবল ঝড়-ঝঞ্ঝা হতো, আজকাল প্রতি বৎসরই কোনো না কোনো ঝঞ্ঝা হয়, স্থানীয় মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, সব ঠিকঠাক হওয়ার আগেই আবার একটি ঝড় এসে উপস্থিত হয়। এ অঞ্চলে মানুষের জীবিকা বলতে প্রধানত কৃষিকাজ, মাছ ধরা এবং গৃহপালিত পশুপালন ছিল। কৃষিকাজ  ছিল মূলত বৃষ্টি নির্ভর।  জ্বালানির কাঠ-কুটো, ঘর ছাওয়ার পাতা, গাছের খুঁটি ইত্যাদি জঙ্গল থেকেই আসত, গবাদি পশুরাও চড়তো  মাঠে ঘাটে। মৎস্যজীবিরাও স্থানীয় প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল ছিলেন। এখন খুব বৃষ্টি হওয়ার দরুন প্রচুর জমি জলের তলায় চলে গেছে, পশু চারণের স্থান প্রায় নেই বললেও হয়।  তাদের রোগের প্রাদুর্ভাবও বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় মানুষ এখন আর পশুপালন করতে পারছেন না, আগে গৃহপালিত গরু, বা ছাগল থেকে দুধ পাওয়া যেত সহজেই, এখন তা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অধিক বৃষ্টিপাত  এবং ঝড় ঝঞ্ঝায় চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, বন্যা হয়ে মাটির চরিত্রে পরিবর্তন ঘটেছে, লবনাক্ত হয়ে পড়েছে, কৃষিকাজও খুব ভালো হচ্ছে না, ফলন কমেছে। এর প্রভাব জন জীবনে পড়েছে, বিশেষ করে তাঁদের খাদ্য ব্যবস্থায়। এখন কি উপায় ? 

একটি সংস্থা এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয় একসাথে ৬০ জন স্থানীয় নারী পুরুষকে ম্যানগ্রোভ বনের উপযোগিতা সম্বন্ধে প্রশিক্ষণ প্রদান করলো। তাঁরা ম্যানগ্রোভ অরণ্যের গুরুত্ব পরিষেবা সম্পর্কে বিশদে অবহিত হলেন, এর পাশাপাশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয় ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বৃক্ষ প্রজাতিগুলির চারা গাছ তৈরী করলেন। সেই চারা গাছ রোপণ করা হলো, ম্যানগ্রোভ পুনরুদ্ধার সম্ভব হলো। উপকূলীয় এলাকায় ম্যানগ্রোভ ইকোসিস্টেম পুনরুদ্ধার (Mangrove restoration) ও সংরক্ষণ ঝড়ের জলোচ্ছ্বাস, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং উপকূলীয় ক্ষয় থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করলো এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলির বিরুদ্ধে একটি বাফার প্রদান করলো, যেমন বন্যা বৃদ্ধি প্রতিরোধ করলো, এখন আর এগুলির ফলে কৃষিজমি জলে নিমজ্জিত হয় না, ফসল নষ্ট হয়না ইত্যাদি। এটি মৎস্য চাষকেও সমর্থন করে। বাস্তুতন্ত্র নির্ভর মৎস চাষ এবং কাঁকড়া চাষ সম্পর্কে প্রচার এবং প্রশিক্ষণের ফলে সেগুলি প্রোটিনের উৎস হলো এবং এই চাষগুলি স্থানীয় মানুষদের জীবিকার সাথে যুক্ত হয়ে তাঁদের অর্থ উপার্জনের অন্যতম একটি পথ হয়ে উঠলো। 

উদাহরণ ৩

একটি জলাভূমি অধ্যুষিত অঞ্চল। কিন্তু সম্প্রতি কিছু  বৎসর যাবৎ বৃষ্টিপাতের ধরণের পরিবর্তন ঘটেছে, বৃষ্টিপাত এতটাই হ্রাস পেয়েছে যে খরা সৃষ্টি হচ্ছে, জলাশয়গুলি শুকিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি আবার প্রায় শুকিয়ে যাওয়া জলাগুলি বুজিয়ে বাসজমি তৈরী হচ্ছে। এইবার জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাওয়ার কারণে এখন বৃষ্টিপাত হলেই বন্যা হয়ে যায় কিন্তু সেই জল ধরে রাখা যায় না। কয়েক বৎসর পূর্ব পর্যন্ত এই অঞ্চলের মানুষ কৃষিকাজ ও পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন আর সেই ফলন নেই, কৃষিজমিতে প্রয়োজনও পরিমানে জলের জোগান নেই। আবার তাপপ্রবাহের ফলে ফসল নষ্ট হচ্ছে। পশুচারণের মাঠগুলিরও অবস্থা খারাপ, পশুখাদ্যের প্রয়োজনীয় ঘাস তেমন একটা উৎপন্ন হয়না। হিট স্ট্রেসের কারণে গবাদি পশুও মারা যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয় মানুষের খাদ্য সংস্থানের উপর প্রশ্নচিহ্ন দেখা যাচ্ছে।  এরূপ চলতে থাকলে অচিরেই যে পুষ্টির নিরাপত্তা ব্যাহত হবে তা বলাই বাহুল্য। তবে এখন কি উপায়?

উপায় হলো জলাভূমি পুনরুদ্ধার (Wetland restoration) করা। জলাভূমি পুনর্বাসন জল প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে, জলের গুণমান উন্নত করতে এবং জলজ প্রজাতির জন্য বাসস্থান সরবরাহ করতে সহায়তা করতে পারে। জলাভূমি বন্যার বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক বাফার হিসেবেও কাজ করে এবং কৃষি ও মৎস্য চাষে সহায়তা করতে পারে। জলাশয়গুলো পুনর্নির্মাণের দিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন অবশ্যই তবে তা ধরে রাখতে কি করা যায়। স্থানীয় মানুষজন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞানের বিজ্ঞানীদের সাথে আলোচনা করে  ঠিক করলেন এই অঞ্চলে স্থানীয় গাছ লাগাতে হবে, এই গাছগুলিই একদিকে যেমন কার্বন সিকোয়েস্ট্রেট (Carbon sequestrate) করে অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণকে ব্যালান্স করবে, আবার মাটিতে জল ধরে রাখার কাজও করবে। এর ফলে জলাভূমিগুলি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে, জীব বৈচিত্র আবার ফিরে আসবে আশা করা যায়। খাদ্য সংস্থান সম্ভব হবে।

আশা করি বাস্তুতন্ত্র-ভিত্তিক-অভিযোজন কিরূপে জলবায়ু পরিবর্তনকে সামলে খাদ্য সংস্থান কে নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারে তা কিছুটা বোঝা গেলো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

রাজমহল: পর্ব-২ (Rajmahal: Part-2)

সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)  রাজমহল: পর্ব-১  -র পর- ঘুম ভাঙলো প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের শব্দে। বাইরে তখন খুবই কুয়াশা, হোটেলের ঘরের কাঁচের ...