পৃষ্ঠাসমূহ

কিচেন গার্ডেন (Kitchen Garden)

সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)


ছোটবেলায় দিদাকে দেখছি কাঁচা রান্নাঘর সংলগ্ন অপেক্ষাকৃত আর্দ্র অঞ্চল থেকে থানকুনি পাতা তুলে আনতে। পেটের রোগে ভুগলে থানকুনি পাতা পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতো, হয়তো এখনও হয়। পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হলেও থানকুনি পাতা বাটা খুবই সুস্বাদু একটি খাদ্য। আবার গ্রামাঞ্চলে মানুষ ক্ষেত, খামার, পুকুর ঘাট, খালবিলের আশপাশ থেকে শাকপাতা তুলে আনতো, আমিও এক আধবার মামাবাড়িতে গেলে দিদির সাথে কালীপুজোর  আগের দিন চোদ্দ শাক তুলতে গিয়েছি। 'কিচেন গার্ডেন' কথাটির বিশেষ ব্যবহার তখন হতো না। আসলে কোনো কিছুর অনুপস্থিতি তার গুরুত্ব বোঝায়। তখনও নগর কেন্দ্রিক সভ্যতা আজকের অবস্থায় পৌঁছয়নি। সকলেরই বাড়িতে একটু আধটু জায়গা, উঠোন ছিল, মানুষ তাতে বিভিন্ন ধরণের সব্জি লাগাতেন, বেশিরভাগ সময়ে তা এমনিই ফেলে দেওয়া সব্জি বা ফলের বীজ থেকে জন্মাতো, পরিচর্যা বিশেষ লাগতও না। ঘরের চালে কুমড়ো, চালকুমড়ো, লাউ, কিংবা উঠোনে লঙ্কা, লেবু, এমনকি বাড়ির পিছনে কচু, বিভিন্ন ফলের গাছ যেমন আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, জামরুল, বেল, নারিকেল ইত্যাদি সহজেই পাওয়া যেত। ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতেও নানান ফলের গাছ ছিল। যেহেতু, এই সকল সুবিধে সহজেই প্রাপ্ত হতো, এর গুরুত্ব তখন অতটা উপলদ্ধি হয়নি। এখন শহরাঞ্চলে এক চিলতে মাটি সহজে পাওয়া যায় না, শহর কেন্দ্রিক সভ্যতায় আজ বড়ো বড়ো গগনচুম্বি অট্টালিকাগুলি আজ মুখ্য ভূমিকায়, মাটি কংক্রিটাবৃত। বাড়ির উঠোন, বাগান আজ অমিল আর তাই 'কিচেন গার্ডেন'-র গুরুত্ব এখন উপলব্ধি হচ্ছে। বাড়ির সংলগ্ন এই বাগানগুলি হারিয়ে যাওয়ার রেশ কিন্তু মানুষের পুষ্টির উপর এসে পড়ছে। যেমন বাড়ির চালে হয়ে থাকা কুমড়ো ভিটামিন A প্রদান করে, বেড়ার গায়ে যে লাউটা হয়ে থাকে তাতে প্রচুর পরিমানে ফোলেট বা ফলিক অ্যাসিড (Folate/ ভিটামিন B9) থাকে, আবার ওল বা কচুতে রয়েছে অনেক ক্যালসিয়াম (Calcium), এগুলো কিন্তু এমনিতেই পাওয়া যেত। পুকুর ধারে হয়ে থাকা নানান শাকগুলোতে মিনারেল আর ভিটামিনের প্রাচুর্য্য উল্লেখযোগ্য (অনুগ্রহ করে পুষ্টি সুরক্ষা এবং খাদ্য সংস্থান- পর্ব-৩: শাক পড়ুন)।

চাল, গম, মূলত শর্করা জাতীয় পদার্থ সরবারহ করে; ডাল, মাছ, মাংস প্রোটিন সরবারহ করে; তৈলবীজগুলি তেল বা স্নেহ জাতীয় পদার্থ সরবারহ করে। এই হলো তিন প্রকার বৃহৎ জাতীয় পুষ্টি উপাদান যা ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্ট (Macro-nutrient) নামে পরিচিত। অপরপক্ষে, শাক-সব্জি, ফল হলো মিনারেল এবং ভিটামিনের অন্যতম প্রধান উৎস, এরা মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট (Micro-nutrient) নামে পরিচিত। এই সকল অত্যাবশ্যকীয় উপাদানগুলি পুষ্টি নিশ্চয়তার জন্যে একান্ত প্রয়োজন, যা অনেক সহজেই গৃহ সংলগ্ন বাগান থেকে পাওয়া যেত এবং এগুলি বাজার থেকে ব্যয় করে ক্রয় করার প্রয়োজন হতো না। কাজেই ব্যবহারিক জীবনে বিনামূল্যে পুষ্টির গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ খাবার পাতে এসে পৌঁছতো।    

সাধারণভাবে, সভ্যতায় নগরকেন্দ্রিকতা বৃদ্ধি পেলে অধিক মানুষ গ্রাম থেকে নগরে বসবাস শুরু করে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে এ চিত্র বর্তমান। কৃষক, পশুপালক, কামার, কুমোর, ছুঁতোর সকলে যারা গ্রামীণ অর্থনীতির মেরুদন্ড ছিল, তারা ক্রমে 'ভালোভাবে' বাঁচার আশায় কর্মসংস্থানের সন্ধানে শহরে আসতে শুরু করেন, গ্রামের অপেক্ষাকৃত খোলামেলা বাগান, উঠোন সহ ঘরের পরিবর্তে শহরের ছোট ছোট গায়ে গায়ে লাগানো ঘর। সকল কিছুই সেখানে বাজার থেকে পয়সা খরচ করে আহরণ করতে হয়। এদিকে শহরও আয়তনে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তার আশেপাশের ভূমির তথা বাস্তুতন্ত্রের চারিত্রিক পরিবর্তন ঘটতে থাকে। বনাঞ্চল পরিষ্কার করে নগর আয়তনে বৃদ্ধি পায়। বনের শুকনো কাঠ জ্বালানির জন্যে, বনের ঘাস পশুখাদ্যের জন্যে, পাতা সারের জন্যে, বাঁশ, গোলপাতা ঘর বানানোর জন্যে, বনের ফল-মূল-মধু খাওয়ার জন্যে - এসকলের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা মানুষগুলো হঠাৎ করে একটা পরিবর্ত পরিস্থিতিতে উপনীত হয়, অনিবার্যভাবে এঁদেরও আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে নগর। এতদিন যখন সকলেই কিছুটা কিছুটা খাদ্য নিজ নিজ পরিবেশ থেকে সংগ্রহ করতো আজ সকলেই সম্পূর্ণটার জন্য বাজার নির্ভর হয়ে পড়েছে। অনিবার্যভাবেই পূর্বের সাধারণ চাষী বর্তমানে পরিণত হয়েছেন বাজার-চালিত কৃষকে, সেই সকল উৎপাদনে মানব সভ্যতা মনোনিবেশ করেছে যা অধিক মুনাফা দেয়, মাত্র কয়েকটি খাদ্যের উপর আজ জোর দেওয়া হচ্ছে, ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে খাদ্য বৈচিত্র।     

আজকে যখন আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছি যে খাদ্যের বৈচিত্র পুষ্টি নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে অপরিহার্য, ততদিনে অনেকটা পরিবর্তন ঘটে গেছে। একসময় যা সহজলভ্য ছিল, উপযুক্ত জ্ঞানের অভাবে যা হেলায় হারিয়েছি তা আজ প্রকৃতই দুর্মূল্য হয়ে উঠেছে। আমাদের দেশে এই বিষয়ে বর্তমানে অনেকগুলি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো স্কুল কিচেন গার্ডেন। প্রধানত এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য স্কুল কিচেন গার্ডেন স্থাপন করার মাধ্যমে, ছাত্র-ছাত্রীদের এর ফলে উৎপন্ন সব্জি ফল ইত্যাদি খাওয়ার ফলে মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টের অভাব পূরণ হবে, তাঁদের শাক-সব্জি ফলানোর অভিজ্ঞতা লাভ হবে, এবং শাক-সব্জি ইত্যাদির পুষ্টি বিষয়ে তাঁরা জ্ঞানলাভ করবেন এবং জাঙ্ক-ফুডের (Junk food)  ক্ষতিকারক দিকগুলি সম্বন্ধে সচেতন হবেন। কিচেন গার্ডেনের প্রচারের উদ্দেশ্যে রাজ্য ভিত্তিক বিভিন্ন উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।বাড়িতে কিচেন গার্ডেন করলে তা যেমন খাদ্যের বৈচিত্র বাড়াবে, পুষ্টির অনিশ্চয়তা দূর করার হাতিয়ার হবে, তেমনি এটা অতিরিক্ত আয়ের একটা পথও হয়ে উঠতে পারে।

শঙ্করপুর (Shankarpur)

সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)

২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে গিয়েছিলাম তাজপুর-শঙ্করপুর-দীঘা বেড়াতে। তাজপুর বেড়ানোর অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে একটি ব্লগ আমি পূর্বে লিখেছি। আজকের ব্লগে আমি শঙ্করপুর বেড়ানোর অভিজ্ঞতা লিখবো। 

ভ্রমণপিপাসু বাঙালীর কাছে কলকাতার উপকণ্ঠে অবস্থিত দীঘার সমুদ্র সৈকত একটি নস্টালজিয়া।সপ্তাহান্তে চলে আসাই যায়। অনেকে এখন একটু অপরিচিত বা স্বল্প পরিচিত পর্যটনকেন্দ্রে বেড়াতে পছন্দ করেন, আমার কিন্তু আজও দীঘা অত্যন্ত প্রিয়। 

ছোটবেলার দীঘার স্মৃতি আজও উজ্জ্বল, তখনও বঙ্গোপসাগরের সৈকতে আজকের মতন মেরিন ড্রাইভ গড়ে ওঠেনি, ঝাউবন হারিয়ে যায়নি, ট্রেন লাইন পাতা হয়নি, নতুন দীঘা গড়ে ওঠেনি, আসে পাশের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলিও আজকের মতন বিকশিত হয়নি। তখন হাওড়া বা ধর্মতলা থেকে বাসে করে দীঘা পৌঁছতে হতো, যা এখন পুরোনো দীঘা বলে পরিচিত। মোবাইল এবং ইন্টারনেট নির্ভর জীবনযাত্রা তখনও গড়ে ওঠেনি, কাজেই বাস স্ট্যান্ডে নেমে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন হোটেল দেখেশুনে ঘর নেওয়াই ছিল প্রচলিত প্রথা, সৈকতের উপরে হলে তো কথাই ছিল না। তবে অনেকে আগে থাকতেই ঘর রিসার্ভ করেও আসতেন। তারপরেই সমুদ্রে ছোটা, সমুদ্রস্নান সেরে, রেস্তোরাঁগুলিতে খাওয়া বা কখনও মনের মতন মাছ রাঁধিয়ে মধ্যাহ্নভোজন সারা, একটু দ্বিপ্রাহরিক বিশ্রাম, আবার সমুদ্রপাড়ে বসে উপভোগ করা, রাত্রে ঝাউবনের মধ্যে দিয়ে যে সরুপথ চলে গেছে তা ধরে হোটেল থেকে সমুদ্রপাড়ের রেস্তোরাঁতে খেতে আসা, এইভাবে দিন দু'য়েক কাটিয়ে আবার ফিরে আসা দৈনন্দিন ব্যস্তময় জীবনে। তারপর অনেক পরিবর্তন হয়েছে, দীঘার পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্রগুলি গড়ে উঠেছে, সৈকত কেন্দ্রিক এই পর্যটন বর্তনীটি (দীঘা-শঙ্করপুর-তাজপুর-জুনপুট-মন্দারমনি) আজ খুবই জনপ্রিয়। এখন দীঘা গেলে বেশিরভাগ মানুষ শংকরপুর, মন্দারমণি, তালসারি, তাজপুর, উদয়পুর সৈকত ইত্যাদি স্থানগুলো ঘুরে আসেন। 

আমরাও তাজপুর থেকে গিয়েছিলাম শঙ্করপুরে। তাজপুর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শংকরপুর সমুদ্র সৈকতে পৌঁছতে সময় লাগে ২০ থেকে ৩০ মিনিট। আর সেখান থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দীঘা। শঙ্করপুর পশ্চিমবঙ্গের একটি উল্লেখযোগ্য মৎস বন্দর কেন্দ্র। শঙ্করপুর সৈকত তুলনামূলকভাবে এখনও কম জনবহুল।
 

সমুদ্র সৈকতে রয়েছে কয়েকটি দোকান, দোকানীরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন, ঝিনুক দিয়ে বানানো বিভিন্ন দ্রব্য, চাবির রিং, শঙ্খ, কাঠের গাড়ি, পুতুল ইত্যাদি আরও হরেক জিনিস। পায়ে পায়ে মৎস বন্দরের দিকে এগিয়ে এলাম, অনেক ট্রলার দাঁড়িয়ে রয়েছে সারি সারি, এগুলি মাছ ধরার ট্রলার। ট্রলার থেকে পাটাতন নামিয়ে রাখা হয়েছে তীরে, সেই পাটাতন বেয়ে বিরাট বিরাট বরফের চাই মাথায় নিয়ে কর্মীরা উঠে যাচ্ছেন ট্রলারে। অত্যন্ত ব্যস্ত দিন, কয়েক হাজার মানুষ এই মাছ ধরার কাজে যুক্ত, এতেই তাঁদের জীবনধারণ হয়। বছরে প্রায় ১০ মাস চলে মাছ ধরার কাজ, দুই মাস এপ্রিল মাসের মধ্যবর্তী সময় থেকে জুন মাসের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত বন্ধ থাকে। ওই সময় মাছের সংখ্যা যেন বৃদ্ধি পেতে পারে সেইজন্যে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। 


এবার এই মৎস বন্দরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মাছের প্রজাতির উল্লেখ করি (আমি পূর্বের একটি ব্লগ 'বাঙালির আহারে মাছ'-এর উপরে লিখছি)। এখানে প্রায় ২০০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়, তার মধ্যে প্রায় ১০০ প্রজাতির মাছ বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমেই বলি কন্ড্রিকথিস (Condrichthyes: যে সকল মাছের দেহে অস্থি অনুপস্থিত, এদের দেহে তরুনাস্থি (Cartilage) বর্তমান) শ্রেণীর কথা। এই শ্রেণীর অন্তর্গত উপশ্রেণী হলো এলাসমব্র্যাংকি (Elasmobranchii)। এদের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য এদের পাঁচ থেকে সাত জোড়া গিল বর্তমান যা বাইরের দিকে উন্মুক্ত, পৃষ্ঠদেশের পাখনা দৃঢ় হয়ে থাকে, এবং দেহে ছোট ছোট প্ল্যাকোয়েড আঁশ উপস্থিত। এই উপশ্রেণীর অন্তর্গত মাছের দেহে সুইম ব্লাডার থাকে না। এদের মুখের অভ্যন্তরে দাঁতের একাধিক সিরিজ রয়েছে। হাঙ্গর, রে ইত্যাদি এই উপশ্রেণীর অন্তর্গত প্রজাতি। ব্ল্যাকটিপ হাঙ্গর (Carcharhinus limbatus), স্পেডনোজ হাঙ্গর (Scoliodon laticaudus), দুধ হাঙ্গর (Rhizoprionodon acutus), ধূসর স্টিং রে (Dasyatis zugei), হানিকোম্ব স্টিং রে (Himantura uarnak) ইত্যাদি এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।হাঙ্গর বা রে বাঙালির পাতে খুব উপাদেয় বলে গণ্য না হলেও বাইরে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। হাঙ্গরের লিভার থেকে প্রাপ্ত তৈলের ঔষধিগুণ রয়েছে, যা ফার্মাসিউটিকাল শিল্পে ব্যবহৃত হয়। কয়েক প্রকার হাঙ্গর এবং রে মাছের লিভার থেকে প্রাপ্ত তৈলের ব্যবহার চর্মশিল্পেও ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও মাছের খাদ্য বা ফিশমিল (Fishmeal) এবং সার (Manure) প্রস্তুতিকরণে এই মাছগুলি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এরপর আসি অস্থিযুক্ত মাছের কথায়, যা অস্থিকথিস (Osteichthyes) শ্রেণীর অন্তর্গত। এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত একটি উপশ্রেণী হলো একটিনটেরিজি (Actinopterygii), যাদের রে-ফিন্ড ফিশ (Ray-finned fish) বলা হয়। ইল (Eel) হলো এই প্রকার মাছ, যা এই বন্দরের একটি উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যিক মাছ। ইলের জীবনচক্র খুব কৌতূহলোদ্দীপক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এদের জীবনচক্রে ক্যাটাড্রোমাস (Catadromous) প্রকার লক্ষিত হয়, অর্থাৎ মিঠা জল (Fresh water) থেকে স্পনিং (Spawn) এবং ডিম পাড়ার জন্যে এরা সমুদ্রের নোনা জলে স্থানান্তরিত হয়। ডিম ফুটে যে চ্যাপ্টা এবং স্বচ্ছ লার্ভা বের হয় তার মাধ্যমে ইলের জীবন শুরু হয়, এদের লেপ্টোসেফালি (Leptocephali) বলা হয়। এরা সাধারণত সমুদ্রের পৃষ্ঠতলের ভাসমান জৈব পদার্থের কণা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।  এর পর এরা গ্লাস ইলে (Glass eel) রূপান্তরিত হয়, এই পর্যায়ে তারা মিঠা জলের দিকে ধাবিত হয়। এরপর যথাক্রমে এলভার (Elver), হলুদ ইল (Yellow Eel) হয়ে তারা পরিণত সিলভার ইলে (Silver Eel) রূপান্তরিত হয়। পরিণত সিলভার ইল স্পনিং এবং ডিম পাড়ার জন্যে আবার সমুদ্রের নোনা জলে ফিরে যায়। একটিনটেরিজি (Actinopterygii)-র অন্তর্ভুক্ত ওপর একটি ফ্যামিলি ক্লুপেডি (Clupeidae)। বাঙালির রসনা তৃপ্ত করে যে ইলিশ তা এর অন্তর্গত। বিভিন্ন প্রজাতির ইলিশ (Hilsa ilisha, H. toli, Ilisha kampeni, I. megaloptera ইত্যাদি) এই বন্দরের উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যিক মাছ। এদের জীবন চক্রে কিন্তু ইলের বিপরীত চিত্র পরিলক্ষিত হয়। এরা এনাড্রোমাস (Anadromous) প্রকৃতির, অর্থাৎ স্পনিং-র জন্যে এরা সমুদ্রের নোনা জল থেকে মিঠা জলে স্থানান্তরিত হয়। এছাড়াও রয়েছে প্রচুর পরিমানে এনকোভি (Anchovy; Family- Engraulidae), সামুদ্রিক ক্যাট ফিশ (Sea Catfish), উল্ফ হেরিং (Wolf Herring; Family- Chirocentridae) ইত্যাদি। এখানে উল্লেখযোগ্য লোটে বা লোইট্যা (Harpadon nehereus), বাঙালির আর এক রসনা তৃপ্তকারক এই মাছ। এর প্রচলিত নাম বোম্বে ডাক (Bombay Duck/Bombay Daak)। এই নামকরণের পিছনের কাহিনীটি বেশ মজার। তখন বোম্বের (বর্তমানের মুম্বাই) মৎসবন্দরগুলোতে বিপুল পরিমানে এই লোটে উঠতো। লোটে বাঙালির খুবই উপাদেয়।  রেলগাড়ি চালু হওয়ার পর মেল ট্রেনের (Mail train) মাধ্যমে তা সুদূর বোম্বে থেকে কলকাতায় এসে হাজির হতো। বাংলায় 'মেল/Mail' শব্দটির অর্থ ডাক, অতএব এর নাম হয়ে গেলো বোম্বে ডাক। এখানে অপর দু'টো উপাদেয় মাছ ব্ল্যাক পমফ্রেট (Black pomfret, Parastromateus niger; Family- Carangidae) এবং সিলভার পমফ্রেটও (Silver pomfrets, Pampus argenteus, P. chinensis) উল্লেখযোগ্যভাবে পাওয়া যায়।

বেশ কিছুক্ষন শঙ্করপুরে কাটিয়ে আমরা রওনা হয়েছিলাম দীঘার উদ্দেশ্যে। 

অক্টোবর, ২০১৭

রাজমহল: পর্ব-২ (Rajmahal: Part-2)

সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)  রাজমহল: পর্ব-১  -র পর- ঘুম ভাঙলো প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের শব্দে। বাইরে তখন খুবই কুয়াশা, হোটেলের ঘরের কাঁচের ...