সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)
পূর্ববর্তী পর্বগুলি পড়ার জন্যে ক্লিক করুন থাইল্যান্ড: পর্ব-১ থাইল্যান্ড: পর্ব-২ থাইল্যান্ড: পর্ব-৩ থাইল্যান্ড: পর্ব-৪ থাইল্যান্ড: পর্ব-৫
আজ একটু বেলা করেই উঠলো সবাই। গত কয়েকদিন ধরে বেশ ভোর ভোরই উঠতে হচ্ছিলো সকলকে, আজ একটু বেশিক্ষন বিছানায় কাটানো যাচ্ছে, বেশ লাগছে। গতকাল একটি ফটো আমরা গাড়িতে ফেলে এসেছিলাম, তাই রুডিকে ফোন করে অনুরোধ করলাম সে যেন গতকালের গাড়িটিই আমাদের জন্যে আজকে পাঠায়, সেটিতেই আমরা যাবো পাটায়া। সকালে উঠে চা-বিস্কুট খেয়ে গল্পগুজব চলতে লাগলো। আজকের প্রাতঃরাশও ছিল নুডলস। সাড়ে দশটার মধ্যে আমরা তৈরী হয়ে গিয়েছিলাম, কথা-বার্তা চলছিল। হঠাৎ আমার ঘরের ফোন বেজে উঠলো, ফোনের ওপারে টনি, আমাদের গাড়ির চালক তথা আমাদের ব্যাঙ্কক ভ্রমণের গাইড। তিনি সময়ের পূর্বেই এসে হাজির হয়েছেন। আমরাও দেখলাম অযথা দেরি করে লাভ নেই, কাজেই আমরা লবিতে নেমে এলাম। প্রথমেই নমস্কার করে এক গাল হেসে আমাদের ফেলে আসা ছবিটি তিনি দিলেন। এদেশে আমাদের দেশের মতন দিনের প্রথম সাক্ষ্যাতে হাত জোর করে প্রণাম করার সংস্কার রয়েছে। আমরা আগেই আজকের বেড়ানোর পরিকল্পনা করেছিলাম, আমাদের আজকের প্রথম দ্রষ্টব্য স্যাংচুয়ারি অফ ট্রুথ।
কাষ্ঠ নির্মিত এক বিশাল প্রাসাদ। প্রাসাদের অভ্যন্তরের প্রতিটি ভাস্কর্য কাঠ নির্মিত। প্রচুর পুরুষ-মহিলা একাগ্র চিত্তে হাতুড়ি আর ছেনির সাহায্যে ফুটিয়ে তুলছেন তাঁদের শিল্পকর্ম।
এরপর আমরা গিয়েছিলাম আন্ডার ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে। এখানে বিশালাকায় একোয়ারিয়ামে রয়েছে বিভিন্ন জলচর প্রাণী। খুব ভালো লাগবে এটি দেখতে।
এরপর আমরা গিয়েছিলাম পাটায়ার ভিউ পয়েন্টে, পাখির চোখে অপূর্ব পাটায়ার সৌন্দর্য ছিল মনোমুগ্ধকর।
এর পরের পাহাড়টিতে এই শহরের বিগ বুদ্ধা স্থাপত্যটি রয়েছে তবে সেখানে আমরা এবার যেতে পারিনি, কাজেই এবার আমাদের গন্তব্য আজকের হোটেল, আমরা ছিলাম তেভান জমিতেনে। জমিতেন সমুদ্রসৈকত এখান থেকে হাঁটা পথে প্রায় ১৫-২০ মিনিট। একটু বিশ্রাম নিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম সমুদ্রসৈকতের উদ্দেশ্যে। সকলের বেশ খিদে পেয়েছিলো, সৈকতের নিকটেই একটি রেস্তোরাঁ আমাদের বেশ পছন্দ হয়েছিল, এর বিশেষত্ব ছিল এটি একটি মাল্টি-কুইসিন রেস্তোরাঁ, এখানে ভারতীয়, বাঙালি, থাই এবং ইউরোপিয়ান সকল ধরণের কুইসিন পাওয়া যায়। রেস্তোরাঁর এম্বিয়েন্সও আমাদের বেশ পছন্দ হয়েছিল। শেফের সাথে আমাদের পরিচয় হলো, উনি বাঙালী, ওঁনার স্ত্রী থাই, পুরো পরিবার একসাথে এই রেস্তোরাঁটি পরিচালনা করেন। তন্দুরি রুটি, জিরা রাইস, মাছের কারী, চিকেন কারী, আমের লস্যি সব দিয়ে আমাদের ডিনারটা বেশ জমে উঠেছিল। অনেক গল্পও হলো, ওঁদের জীবন, থাইল্যান্ডের জীবন, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি। বারবার উঠে এসেছিলো করোনা-র সময়কালের কথা, সে সত্যই এক সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার কাহিনী।
আজকের মতন বিশ্রাম। আমরা ঠিক করেছিলাম ঘরে গিয়ে সবাই গল্প করবো, কিন্তু তা আর হল না। সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। আবার আগামীকাল ভোর ভোর ওঠা ছিল, কারণ আগামীকাল আমাদের এই ভ্রমণের অন্তিম দিন।
আজ আমরা সবাই সকাল সকাল উঠে পড়েছিলাম। এবার প্রাতঃরাশ সেরে আমরা যাবো সমুদ্রে স্নান করতে। গত কাল রাত্রে ফেরার পথে সকলের জন্যে নিজ নিজ পছন্দ অনুসারে প্রাতঃরাশ কিনে আনা হয়েছিল। চা-বিস্কুট খেয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। আগেই আমাদের আজকের দুপুরের খাবার আলু পরোটা অর্ডার দেওয়াই ছিল, সমুদ্রে স্নান করে ফেরার পথে সেটা নিয়ে আসার কথা। বেরোনোর আগে আমরা খেয়ে বেরোবো।
এবার ফেরার পালা। সবথেকে বেশি আমরা প্রকৃতির কাছে কৃতজ্ঞ। কয়েক মাস আগে যখন পরিকল্পনা করেছিলাম তখন আমাদের মনে বৃষ্টির একটা ভয় ছিল, জুলাই মাসে বৃষ্টি হওয়াটা একেবারেই আশ্চর্য নয়। এমনকি বেড়াতে আসার পূর্বের সপ্তাহটিতে আমাদের ওখানে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হয়েছিল, তবে প্রকৃতি আমাদের মনোস্কামনা শুনেছিলেন, খুব সুন্দর রৌদ্র ঝলমল আবহাওয়া আমাদের বেড়ানোটাকে আরও সুন্দর করে তুলেছিল। বেলা ১২ টার সময়ে আমরা হোটেল ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম, নিৰ্দিষ্ট সময়েই বির গাড়ি নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন হোটেলে। গাড়িতে মালপত্র সব তুলে দেওয়া হলো। পাটায়াকে বিদায় জানিয়ে এবার আমাদের গন্তব্য ব্যাঙ্ককে সুবর্ণভূমি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অদূরে অবস্থিত সিয়াম প্রিমিয়াম আউটলেট (Siam Premium Outlet), সবাই জিনিসপত্র দেখা কেনার জন্যে উৎসাহী, কাজেই আমরা এই স্থানে ঘন্টা তিনেক কাটালাম। দোকানগুলিতে ঘোরাঘুরির মাঝে বিভিন্ন ধরণের ফ্রাইড রাইস, আর থাই টি দিয়ে খাওয়াদাওয়া সারলাম। আমাদের ঘোরাঘুরি শেষ হলে আমরা চললাম সুবর্ণভূমি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে, এখান থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের পথ গাড়িতে।
মা-বাবা দের যে বিমান সংস্থার টিকিট ছিল দেখলাম সেই সংস্থা তাদের বিমান বাতিল করেছে এবং কোনো নির্দিষ্ট ব্যবস্থাও করেনি। এরূপ দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বড়ই আশ্চর্য করে আমাদের, তবে কি আর করা ! আমরা ওপর একটি বিমানের টিকিট কিনে নিলাম। ওঁদের বিমান ছিল রাত্রি ১১ টা বেজে ৩০ মিনিটে। আমাদের পরের দিনই ভোর ১ টা বেজে ৪৫ মিনিটে। বোর্ডিং, ইমিগ্রেশন, সিকিউরিটি সবই ওঁদের আমাদের আগে হয়ে গিয়েছিলো। আমরা তখনও বাইরেই অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে আমাদের প্রক্রিয়া শুরু হলো, যখন ভিতরে গিয়ে মা-বাবা দের সাথে দেখা হলো ততক্ষনে ওঁদের বিমানের সময় প্রায় হয়ে গিয়েছিলো। ওঁরা এয়ারপোর্টে কোনো খাবার খেলো না, ফ্লাইটে ডিনার করবে বললো। একসাথে কিছুক্ষন কাটিয়ে ওঁদের বিমানে ওঠার পর আমরা আমাদের গেটের দিকে এগিয়ে চললাম, পথে একটি দোকানে ডিনার সেরে নিলাম।
এবার ফিরে চলা, মাথায় ভিড় করে আসছে একের পর এক কাজ। গিয়েই সামনের সপ্তাহে আমাকে যেতে হবে একটি আন্তর্জাতিক ইকোলজি বিষয়ক সম্মেলনে, সেই সংক্রান্ত বেশ কিছু কাজ রয়েছে। বেশ ভালো বেড়ানো হলো। শেষ মুহূর্তে মা-বাবা দের জিজ্ঞেস করেছিলাম এর পর তাঁরা কোথায় যেতে পছন্দ করবে? উত্তর এখনো নিশ্চিত হয়নি, যদি কোথাও যাই নিশ্চয় তা ভবিষ্যতে আমার ব্লগে লেখার চেষ্টা করবো।
জুলাই, ২০২৩






















