পৃষ্ঠাসমূহ

মালদা: পর্ব-২ (Malda: Part-2)

সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)

মালদা ভ্রমণের প্রথম পর্বটি পড়ার জন্যে ক্লিক করুন মালদা: পর্ব-১

গতকাল রেডিওতে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম ভাঙলো বেশ ভোরে। হোটেলে প্রাতঃরাশ সকাল ৮ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত। আমরা পৌনে ন'টার মধ্যে প্রাতঃরাশ সেরে ন'টা নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম। গতকালই আমি অটো-র জন্যে বলে রেখেছিলাম। সঠিক সময়ে আমাদের অটো চালক দাদা এসে গিয়েছিলেন। বর্তমানে মালদা শহরের দক্ষিণে গৌড় এবং উত্তরে রয়েছে পাণ্ডুয়া। আমরা সকালে প্রথমে গৌড় ঘুরে মধ্যাহ্নভোজন সেরে পাণ্ডুয়া ঘুরতে যাবো। ঐতিহাসিক স্থানের বর্ণনা দিতে গেলে একটা কালানুক্রম বজায় রাখা প্রয়োজন, তবেই পারম্পর্য বোঝা যায়, নচেৎ স্থানটিকে অনুধাবন করা মুশকিল হয়ে যায়, তবে ঘোরা তো আর সেইভাবে হয় না, যে স্পটটি আগে পরে সেটি আগে ঘুরে নিতে নয়। তাই আমি এখানে আমার বেড়ানো অনুযায়ী নয় বরং ইতিহাসের হাত ধরে পাঠক-পাঠিকাকে আমাদের বেড়ানোটির বর্ণনা করবো। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক স্থাপত্যটির সম্বন্ধে যে বর্ণনা পুরাতত্ত্ব বিভাগের বোর্ডে লেখা রয়েছে তার চিত্র দেওয়ার চেষ্টা করবো যাতে পাঠক পাঠিকা তথ্য সম্বন্ধে সেখান থেকেও অবগত হতে পারেন।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, এটি একটি ঐতিহাসিক স্থানের ভ্রমণকাহিনী (গবেষণাধর্মী বা গবেষণা নির্ভর ঐতিহাসিক প্রবন্ধ নয়) যার অন্যতম উপাদান স্থানীয় গাইডদের প্রদত্ত তথ্য, সাহিত্যের বিভিন্ন উপাদান, প্রচলিত লোককথা, বিশ্বাস ইত্যাদি।

যে গৌড়ের প্রতি অসীম আগ্রহে আমরা এসে পৌঁছলাম, তখন সেখানে লক্ষণাবতী নামে এক নগর ছিল। কাশী জয় করে প্রবল পরাক্রমী লক্ষণ সেন নৌ-পথে এসে পৌঁছলেন মহানগরে। তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্যে পিতা বল্লাল সেনের রাজপ্রাসাদ বল্লালবাটী তো বটেই সেজে উঠেছিল সমগ্র নগর। আজ আমরা যে ধ্বংসাবশেষের পাশে দাঁড়িয়ে আছি, তাই অতীতের বল্লালবাটী, বল্লাল সেনের রাজপ্রাসাদ। জানিনা আর কতদিন এই অবশেষটুকু টিঁকবে, বিশেষ কোনো সংরক্ষণ চোখে পড়েনি। 


প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষের নিকটেই রয়েছে জাহাজঘাটা, এখানেই নাকি জাহাজ এসে নোঙ্গর করতো সেই সময়ে। 

এই সেই সেন বংশ (১৭৭০-১২৩০ খ্রিস্টাব্দ) যার প্রবল পরাক্রমে পাল বংশের রাজা গোপালদেব ত্যাগ করলেন বঙ্গদেশ। পরাজিত হৃতসর্বস্ব রাজা গোপালদেব আশ্রয় গ্রহণ করলেন মগধে। পাল বংশের রাজত্ব অস্তমিত হলো, ধন-সম্পত্তি বিলুপ্ত হলো, কামরূপ থেকে প্রয়াগ পর্যন্ত একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলো সেন বংশের, কিন্তু পাল বংশের উদারতা, শিক্ষা-দীক্ষা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা, উন্নত সমাজচেতনা- এসব কিন্তু আজও প্রশংসিত, সম্পূর্ণ মুছে দিতে পারলো না পরবর্তী শাসক। এর একটি নিদর্শন রয়েছে মালদা জেলার হাবিবপুর ব্লকের জগজ্জীবনপুর আর্কিওলজিক্যাল সাইটটিতে। সময়ের অভাবে আমরা যেতে পারিনি তবে পর্যটকরা দেখে আসতে পারেন। সাইটটি মালদা শহরের কেন্দ্র ইংরেজ বাজার থেকে প্রায় ৪১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই স্থান থেকে পাওয়া সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারের মধ্যে রয়েছে পাল সম্রাট মহেন্দ্রপালদেবের একটি তাম্র-ফলক শিলালিপি এবং নবম শতাব্দীর একটি বৌদ্ধ বিহারের কাঠামোগত অবশেষ যা নন্দদীর্ঘিকা-উদ্রাঙ্গ মহাবিহার নামে পরিচিত।

এরপর অনেক দিন অতিবাহিত হয়েছে। কালের নিয়ম মেনেই একের পর এক শাসক এসেছেন, প্রবল পরাক্রমে নিজেকে ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে প্রতিষ্ঠা করেছেন, আবার কালের নিয়মেই সে যুগের সমাপ্তি হয়েছে। বাংলায় সেন বংশের পরে বখতিয়ার খিলজির হাতে গড়ে উঠেছে খিলজি সাম্রাজ্য, তারপর দিল্লি সালতানাত মামলুক এবং তুঘলক সাম্রাজ্যের অধীনে বাংলায় গভর্নর নিযুক্ত হন। তুঘলক সাম্রাজ্যের মাঝামাঝি সময় থেকে ইলিয়াস শাহী বংশের হাত ধরে বাংলার স্বাধীন সুলতানী যুগের আরম্ভ হয়।

বাংলায় তখন ইলিয়াস শাহী বংশের রাজত্ব (১৩৫২ থেকে ১৪১৪ খ্রিস্টাব্দ) চলছে। ইলিয়াস শাহী বংশের দ্বিতীয় সুলতান সিকান্দার শাহের (১৩৫৮ থেকে ১৩৯০ খ্রিস্টাব্দ) শাসনকালে নির্মিত হয় এই আদিনা মসজিদ। দিল্লীর সুলতানী সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে দুই বার জয়লাভের (যথাক্রমে ১৩৫৩ এবং ১৩৫৯ খ্রিস্টাব্দ) এই মসজিদটি ছিল এই বংশের উচ্চাশার একপ্রকার প্রকাশ। মসজিদটির দেওয়ালের লিপিতে সুলতান সিকান্দার শাহকে একজন 'মহিমান্বিত সুলতান' বা 'বিশ্বস্থতার খলিফা' বলে বর্ণিত হয়েছে।





ইলিয়াস শাহী বংশের পরে আসে রাজা গণেশের বংশ (১৪১৪ থেকে ১৪৩৫ খ্রিস্টাব্দ)। রাজা গণেশের পুত্র সুলতান জালাউদ্দিন মুহম্মদ শাহ, জন্মগত ভাবে হিন্দু হলেও পরবর্তীকালে উনি মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, নির্মাণ করেন এই একলাখি মাজারটি। কথিত রয়েছে এই মাজারটি তৈরী করতে তৎকালীন সময়ের এক লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল, তাই সমাধিসৌধটির নাম হয় একলাখি মাজার।


মাজারটির প্রবেশপথের ভাস্কর্য, টেরাকোটার কাজ, আট দিক বিশিষ্ট স্তম্ভ দৃষ্টি আকর্ষণ করে।


রাজা গণেশের হাতে ইলিয়াস শাহী বংশের পতন হলেও, রাজা গনেশের বংশ অধিক কাল যাবৎ স্থায়ী হয়নি। ১৪১৪ খ্রিস্টাব্দে রাজা গনেশ প্রথমবারের জন্যে সিংহাসন আরোহন করেন আর এই বংশের রাজত্বকাল চলে ১৪৩৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। অতঃপর নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহের হাত ধরে পুনরায় বাংলায় ইলিয়াস শাহী বংশের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়। নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহের পুত্র রুকুনুদ্দিন বরবক শাহের আমলে বাইশ গাজি প্রাচীরের নির্মাণ হয়। বাইশ গজ উচ্চতার জন্যে এর নাম বাইশ গাজি হয়েছে। বহিঃশত্রুর হাত থেকে নগরকে সুরক্ষিত রাখার জন্যেই এর প্রাচীর নির্মাণ করা হয় বলে মনে হয়। বর্তমানে প্রাচীরের অনেকাংশ ভগ্নপ্রায় এবং এর সংরক্ষণের প্রয়োজন।



নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহের পৌত্র শামসুদ্দিন ইউসুফ শাহ (রুকুনুদ্দীন বরবক শাহের পুত্র)-র শাসনকালে চামকাটী মসজিদটিও নির্মিত হয়।


চমকাটী বা চিকা মসজিদের উত্তরপূর্ব দিকে অবস্থিত গুমটি দরওয়াজা। সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহ এক গম্বুজ বিশিষ্ট এই তোরণটি নির্মাণ করান, যা গৌড়ের পূর্বদিকের প্রবেশ পথ ছিল। 


এখনও কয়েকটি টালির গাত্রে রঙ বিদ্যমান রয়েছে, তবে আর কতদিন এগুলি স্থায়ী হবে তা জানিনা।


এর পরের গন্তব্য দাখিল দরওয়াজা, লক্ষণাবর্ত বা পরবর্তীকালের লাখনৌটির দুর্গের প্রবেশদ্বার এই দাখিল দরওয়াজা। ইলিয়াস শাহী বংশের দ্বিতীয় পর্বে (১৪৩৫ থেকে ১৪৮৭ খ্রিস্টাব্দ) নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহের এই প্রবেশদ্বার নির্মিত হয়। তবে এই প্রবেশদ্বারের নির্মাণ এবং পুনঃনির্মাণ  নিয়ে ঐতিহাসিক মতান্তর রয়েছে।  মনে করা হয়, দাখিল দরওয়াজার  বর্তমান রূপটি হুসেন শাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা আলাউদ্দিন হুসেন শাহী নির্মাণ করান।



ফিরোজ মিনারটি স্থাপন করেন সুলতান সৈফুদ্দিন ফিরোজ শাহ। ইলিয়াস শাহী বংশের দ্বিতীয় পর্বের সমাপ্তির পর বাংলার শাসনভার এসেছিলো হাবশী বংশের (১৪৮৭ থেকে ১৪৯৪ খ্রিস্টাব্দ) হাতে। সৈফুদ্দিন ফিরোজ শাহ ছিলেন এই বংশের দ্বিতীয় সুলতান। এই মিনারটির দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় এটি একটি পাঁচ তলা বিশিষ্ট মিনার। প্রথম তিনটি তলা ১২ টি দিক বিশিষ্ট (Dodecagon) এবং উপরিস্থিত দুইটি তলা গোলাকার। এটি দিল্লীর কুতুব মিনার সদৃশ। কথিত আছে যে মিনারটির উচ্চতা সুলতানকে খুশি করতে না পারায় মিনারটির প্রধান আর্কিটেক্টকে সুলতান উপর থেকে নিচে ফেলে দেন, যদিও এই বিষয়ে ঐতিহাসিক তথ্য আমার জানা নেই। মিনারটির বাইরের দেওয়ালে বেশ কয়েকটি মৌচাক হয়েছে দেখলাম। মনে হয় এগুলি জায়ান্ট মৌমাছির (Giant honey bee: Apis dorsata) চাক, তারা এরূপ চাক তৈরী করে। 



হাবশী বংশের পরে বাংলার শাসনভার ন্যস্ত হয় হুসেন শাহী বংশের (১৪৯৪ থেকে ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দ) উপর, সেই বিষয়ে আসছি পরবর্তী পর্বে।


জানুয়ারী, ২০২৪

মালদা: পর্ব-১ (Malda: Part-1)

সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)

সকাল ন'টায় কলকাতা স্টেশন থেকে রওনা হয়ে ১২৩৬৩ কলকাতা-হলদিবাড়ি সুপারফাস্ট সঠিক সময় বিকাল ৩টে-তে মালদা টাউন পৌঁছলো। আর আমরা এসে পৌঁছলাম অতীতের মহানগর গৌড়ে। ১ নম্বর প্লাটফর্মের বাইরে বেরিয়ে পাওয়া যায় টোটো, সেই বাহনই আমাদের পৌঁছে দিলো হোটেলে। রেলওয়ে স্টেশন থেকে যে রাস্তাটি রথবাড়ি মোড়ের দিকে চলে যাচ্ছে, সেই রাস্তার উপরেই হোটেল। রেলগাড়িতে ঝালমুড়ি, পেয়ারা মাখা (বেশ কয়েক বৎসর হলো বিভিন্ন ফল মেখে বিক্রয় করার প্রচলন হয়েছে। পূর্বে, আমার ছোটবেলায়, সাধারণত দোকানী পেয়ারা কেটে তাতে নুন, কখনও বিট নুন, দিয়ে ঠোঙায় করে দিতেন। এখন দেখি, পেয়ারা কেটে তাতে কাসুন্দি, নুন, বিট নুন, লঙ্কার গুঁড়ো ইত্যাদি দিয়ে মেখে কাগজের প্লেটে করে দেয়। খেতে ভালোই লাগে, তবে অন্যান্য উপকরণের প্রাধান্যে পেয়ারার স্বাদের গুরুত্ব কমে যায়।), চা, কেক ইত্যাদি টুকিটাকি খাওয়া চললেও দুপুরের খাওয়া হয়নি, কাজেই হোটেলে পৌঁছে প্রথম গন্তব্য হোটেলের রেস্তোরাঁ। খাওয়া-দাওয়া সারার পর একটু বিশ্রাম নিয়ে আমরা শহরটা একটু ঘুরতে বেরোলাম। মালদা ভ্রমণ আমাদের এই প্রথম, এমনিতে কর্মব্যস্ততার কারণে খুব একটা ঘোরা হয়ে ওঠেনা আমার, যা ঘোরা সম্ভব হয় তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কর্মসূত্রে। আমাদের হোটেলটির নিকটে রয়েছে একাধিক আধুনিক রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, হোটেল, ব্যাঙ্কের এটিএম, মন্দির, দোকান-বাজার; সব মিলিয়ে বেশ শহর, তবে কোলাহল কিছুটা কম। এদিকটা ঘুরে এবার চললাম রথবাড়ি মোড়ের উদ্দেশ্যে। এটি মালদা শহরের  একটি  গুরুত্বপূর্ণ স্থান, কলকাতা থেকে শিলিগুড়ির বাসগুলি এই মোড় হয়েই যায়। এখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার বাস বা গাড়ি ছাড়ে, এমনকি শহরটির দর্শনীয়স্থানগুলি ঘোরার জন্যে এখন থেকেই গাড়ি রিসার্ভ করা যায়। হাঁকডাক, কোলাহল, মানুষের ব্যস্ততা সব মিলিয়ে স্থানটি নিজের গুরুত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছে। বাঙালী জীবনে চা একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আমরা সাধারণত দিনে অল্প অল্প পরিমানে অনেক বার চা খাই। বর্তমানে সেই চায়ের আবার বিভিন্ন রূপ, কেউ খান দুধ-চিনি সহযোগে, কেউ দুধ ছাড়া চিনি দিয়ে, কেউ দুধ দিয়ে চিনি ছাড়া, আবার কেউ দুধ এবং চিনি উভয় উপকরণই বর্জন করে শুধু চা। দোকানী কিন্তু বেশ মনে রেখে চা তৈরী করে পরিবেশন করে যান। কোলাহল প্রিয় আমাদের আনন্দটা আরও কিছুটা বাড়িয়ে দিলো এক কাপ চা, ভালো লাগলে আরও এক কাপ। 

জানুয়ারী মাসের শেষ সপ্তাহ, এখনও বেশ ঠান্ডা রয়েছে এখানে। এ বৎসর পশ্চিমবঙ্গে ঠান্ডাটা বেশ জমিয়ে পড়েছে, এটা উপভোগ্য। গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে শীত আমার কাছে অনেক প্রিয়। ছোটবেলায় কোনো এক ছোটদের পত্রিকায় কুয়াশার মধ্যে দিয়ে খেঁজুরের রসের বাঁক হাতে ক্ষেতের আল বেয়ে এক ব্যক্তি আসছেন আর এক দোকানী গ্রাম্য রাস্তার ধারে উনুন ধরিয়ে চা তৈরীর আয়োজন করছেন- এরূপ একটি চিত্র দেখেছিলাম। এই ছবিটি এখনও আমার মনে গেঁথে রয়েছে এবং আমার প্রিয় শীতকালের রূপ আজও ওই ছবিটির আধারেই আধারিত। আর শুধু কি তাই ! পৌষ পার্বনের পিঠে-পুলি, জয়নগরের মোয়া, পাটালি গুড়, পিকনিক, চিড়িয়াখানা ঘোরা, ভোরবেলা কাঁপতে কাঁপতে স্নান করে সরস্বতী পুজোর অঞ্জলি দেওয়া কি ছিল না ছোটবেলার শীতকালে। তবে ধূলোর প্রকোপ দেখলাম বেশ বেড়েছে, কুয়াশার সাথে মিশে স্মগ তৈরী করছে। দূষণের মাত্রা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের একটা ধারণা রয়েছে যে গ্রামে বোধহয় শহরের মতন দূষণের প্রকোপ নেই, কিন্তু বাস্তবে তা মনে হলো না, এই ভ্রমণের সময় সর্বত্রই, গ্রাম-শহর নির্বিশেষে দূষণের চিত্রটা একই রকম দেখলাম। এটা নিয়ন্ত্রণ করা একান্ত প্রয়োজনীয় বলেই মনে হয়, অন্যথায় মানুষের জীবনে এর নেতিবাচক পরিনাম পড়বে এবং তা নিয়ন্ত্রণ যে সহজ হবে না তা বলাই বাহুল্য।  

রথবাড়ি থেকে হোটেলে ফিরে স্নান সেরে দেখি আমার বড়ো পিসির এক আত্মীয় আমাদের সাথে দেখা করতে এসেছেন, আমার সাথে প্রথম পরিচয়, পূর্বে কখনও পরিচয় হয়েছে তা মনে পড়ে না। এঁরা মালদা-র বাসিন্দা, আমাদের জন্যে এখানকার আম-কাসুন্দির আচার নিয়ে এসেছিলেন। সেই আচারের বোতলটি আমরা ফেরার সময়  সাথে করে নিয়ে এসেছি। এখন যখন এই ভ্রমণ কাহিনীটি লিখছি, সেই আঁচারের স্বাদ আমি গ্রহণ করেছি, অপূর্ব স্বাদ। পরবর্তী ব্লগে মালদার বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানগুলির ভ্রমণের বর্ণনা করার চেষ্টা করবো।

সপ্তাহান্তে বা ছোট কোনো ছুটিতে ঐতিহাসিক স্থান মালদা ঘুরে আসা যেতে পারে।

 

জানুয়ারী, ২০২৪

রাজমহল: পর্ব-২ (Rajmahal: Part-2)

সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)  রাজমহল: পর্ব-১  -র পর- ঘুম ভাঙলো প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের শব্দে। বাইরে তখন খুবই কুয়াশা, হোটেলের ঘরের কাঁচের ...