পৃষ্ঠাসমূহ

ইতিহাসের পটভূমিতে রাজগীর: ফিরে দেখা (Rajgir in the Background of History: A travelogue )

সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)

সৌজন্য: সায়ন্তিকা নাথ

এ ভ্রমণ বৃত্তান্ত আমার ছোটবেলার, আমি তখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি। বাবার এক বন্ধুর পরিবারের সাথে আমরা গিয়েছিলাম রাজগীর। বাবাকে কখনওই বেড়ানোর দীর্ঘ পরিকল্পনা করতে দেখিনি, হঠাৎ করেই ঠিক করে ফেলতেন, কখনও টিকিট কেটে এনে বাড়িতে এসে আমাদের নিয়ে রওনা হতেন। কাজেই এবারের রাজগীর যাওয়াও এর বিশেষ ব্যতিক্রম হলো না, দুই-তিন দিনের মধ্যেই বেরোনো। বলাই বাহুল্য বর্তমান সময়ের মতন দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা তখনকার দিনে ছিল না, বড়ো কোনো রেলওয়ে স্টেশনে, যেমন শিয়ালদা বা হাওড়া, লাইন দিয়ে টিকিট কাটা, লোক জনের মাধ্যমে খোঁজ খবর নিয়ে হোটেল ঠিক করা, হাতের কাছে উপযুক্ত কোনো অফিস বা দোকানে গিয়ে তা রিজার্ভ করার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। অনেক সময় তো আগে থাকতে হোটেল রিজার্ভ না করতে পারলে সেই স্থানে পৌঁছে আমাদের কোথাও দাঁড় করিয়ে বাবাকে হোটেল খুঁজে তারপর আমাদের নিয়ে গিয়ে তুলতেন তবে তারও একটা মজা ছিল, জায়গাটা কেমন হবে, লোকজন কেমন, খাওয়া-থাকা-ঘোরা ইত্যাদি পুরো বিষয়টা কল্পনা করতে করতে যাত্রার পূর্বের দিনগুলি কাটতো। উৎসাহ, আনন্দ আর উত্তেজনা মিলে একটা অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি হতো বড়ো মামার একটি ভ্রমণসঙ্গীছিল, সেটি নিয়ে আসা হলো, তখন ভ্রমণসঙ্গীর হাত ধরেই মানুষ দেশটাকে চিনতো, এই বইটি ছিল ভ্রমণের অত্যাবশ্যকীয় একটি উপাদান। কিছুদিন আগে যখন কোভিড-১৯ মহামারীর জন্যে লক-ডাউন হয়েছিল, শুনলাম বড়মামা সকাল থেকে সেই ভ্রমণসঙ্গীর একখানি আধুনিক সংস্করণ নিয়ে একটার পর একটা ভ্রমণ পরিকল্পনা করে যাচ্ছেন। যাইহোক, আমি ফিরি সেই রাজগীর ভ্রমণের কাহিনীতে। মোবাইল ফোন তখন ছিলোনা, কাজেই হাওড়া স্টেশনের বড়ো ঘড়ির তলার খুব গুরুত্ব ছিল, সবাই সবাইকে ওই জায়গাটার কথা বলে রাখতো সাক্ষাৎ-এর স্থান হিসেবে। এখন বোধহয় এই স্থানটির গুরুত্ব এই প্রসঙ্গে কিছুটা কমেছে। আমরাও পূর্ব নির্দেশিত স্থানটিতে যথা সময়ে পৌঁছে গেছিলাম। দূরপাল্লার রেল গাড়িগুলি ছিল লাল রঙের, আমাদেরও লাল রঙের পূর্বা এক্সপ্রেস সকাল ৮ টায় রওনা হলো। এই রেল ভ্রমণ আরও একটা কারণে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে আমার কাছে। আমাদের গন্তব্য বক্তিয়ারপুর, সেখান থেকে গাড়িতে করে যাওয়ার কথা রাজগীর। ঠিক মনে করতে পারিনা কোন স্টেশন, তবে তখন দুপুর হয়ে গিয়েছে, গাড়ি স্টেশনে দাঁড়ালে লোকজন অসংরক্ষিত টিকিট নিয়ে সংরক্ষিত কামরাতেও উঠে পড়ছেন, দেখতে দেখতে খুবই ভিড় হয়ে গেলো কামরাটা। যে সকল যাত্রী শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, তাঁদেরও উঠে বসতে হলো, আসনগুলি তো পূর্ণ হলই, এমনকি চলাচলের রাস্তাতেও মানুষ বসে পড়লেন। মুহূর্তে সংরক্ষিত কামরাটি অসংরক্ষিত কামরাতে পরিণত হলো। কিন্তু অবাক হওয়ার কিছুটা তখনও বাকি ছিল।  কিছুক্ষণ পর দেখলাম লোকজন গাড়ির চেন টেনে টেনে মাঝে মাঝেই নেমে যাচ্ছেন, বোঝা গেলো এইভাবে যাতায়াত করতে তাঁরা অভ্যস্ত। কিন্তু আমরা এই প্রকার চিত্রে অভ্যস্ত ছিলাম না, কাজেই অবাক হয়ে দেখতে লাগলাম। বৃহৎ ভারতের একটি চিত্র এইভাবে আমার সামনে উঠে এসেছিলো, তখন হয়তো তা আমি বুঝতে পারিনি তবে আজ তা আমি উপলব্ধি করতে পারি। যাইহোক নির্ধারিত সময়ের থেকে একটু দেরি করেই গন্তব্যে পৌঁছলো গাড়ি, লোকজন কাটিয়ে, ব্যাগ পত্র নিয়ে আমরা হুড়মুড় করে নামলাম বক্তিয়ারপুর জংশন স্টেশনে বক্তিয়ার খিলজির নামে এই স্টেশন, এ কথায় কিছুক্ষণ পরে আসছি। এবার গাড়ি ঠিক করতে হবে। চারিদিকে হাঁকডাক, স্টেশনেই উঠে এসেছেন গাড়ির চালক, হোটেলের দালাল সবাই। আমাদের এক সহযাত্রী একটি গাড়িতে উঠে বসলেন, উনিও যাবেন রাজগীরে, উনিই আমাদের ডাকলেন সেই গাড়িতে। এই সহযাত্রীটির একটি হোটেল রয়েছে রাজগীরে, এটা আমাদের জন্যে বেশ ভালো হলো, আমরা ওখানেই উঠলাম। হোটেলের দোতলায় আমাদের দু'টি ঘর দেওয়া হয়েছিল। দোতলায় মেঝেতে এক জায়গায় বড় একটা অংশে কোনো ঢালাই নেই, সুন্দর কতকগুলি লোহার রড বেড়ার মতন করে শোয়ানো রয়েছে, সেখান থেকে একতলায় রিসেপশন-র জায়গাটি দেখা যায়, এটি ছিল আমার আকর্ষণের একটি কেন্দ্র। প্রায়ই সেই স্থানের পাশে গিয়ে আমি দাঁড়াতাম আর বিষ্ময়ে তাকিয়ে থাকতাম। যখন রাজগীরে এসে পৌঁছলাম তখন সন্ধ্যে হয়েছে, আমরাও ক্লান্ত, কাজেই ঐদিনের মতন রাত্রিকালীন আহার সেরে বিশ্রাম।

পরদিন ভোরে ঘুম ভাঙলো। আজকে বেড়াতে বেরোবো। প্রাতঃরাশ সেরে একটি টাঙ্গা ঠিক করা হলো। ঘোড়ায় টানা টাঙ্গাগুলিতে পিঠোপিঠি মোট চারটি করে আসন ছিল, দুটি সামনের দিকে মুখ করা আর দু'টি পিছন দিকে মুখ করা। এই টাঙ্গা ছিল আমাদের রাজগীর ভ্রমণের অপর একটি আকর্ষণ। এই বাহনটিতে চড়েই আড়াই হাজার বছর পূর্বের ইতিহাসের অন্দরে আমাদের প্রবেশ, কান পাতা রাজগৃহের গল্পে, নিজেদেরই ইতিহাসের সাথে আরো একবার নিজেদের পরিচয় করানো ষোড়শ মহাজনপদের এক জনপদ মগধ। বর্তমানের এই রাজগীর, অতীতের 'রাজগৃহ', সেই মগধের বৃহদ্রথ, প্রদ্যোৎ এবং তারপর হার্যঙ্ক বংশের রাজধানী। প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ সাইক্লোপিয়ান দেওয়ালটি বহিঃশত্রুর হাত থেকে নগরকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে রাজা বৃহদ্রথ নির্মাণ করেছিলেন। রাজা বৃহদ্রথের পুত্র জরাসন্ধ, মহাকাব্য মহাভারতে উল্লেখিত একটি বহু পরিচিত চরিত্র। শক্তি, সামর্থ্য এবং পরাক্রমে অতুল জরাসন্ধের জন্ম ও জীবনের কাহিনী আজও লোকমুখে প্রচলিত। স্থানীয় বিশ্বাস এই স্থানে তিনি শারীরিক কসরত করতেন, তাই এই স্থান জরাসন্ধের আখড়া বলে পরিচিত। এখানে ইতিহাস মিশে গেছে মহাকাব্যে। স্রষ্টার কল্পনা, দর্শন, ইতিহাস একত্রেই প্রবাহিত হয়ে চলেছে।

বৃহদ্রথ বংশের (১৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৬৮৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) পর মগধ শাসন করেছিলেন প্রদ্যোৎ (Pradyota) বংশের রাজারা (৬৮২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৫৪৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)। তারপর মগধের সিংহাসন আরোহন করেন রাজা বিম্বিসার (৫৪৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৪৯১খ্রিস্টপূর্বাব্দ), হার্যঙ্ক (Haryanka) বংশের প্রতিষ্ঠাতা। আজকের রাজগীর, রাজা বিম্বিসারের রাজধানী তখন পরিচিত ছিল গিরিব্রজ নামে। বিম্বিসার ছিলেন পরাক্রমী এবং কূটনীতি বিষয়ক জ্ঞানী একজন রাজা। নানা প্রদেশের সাথে বৈবাহিক সূত্রে তিনি বন্ধুত্ব স্থাপন করেন। তাঁর প্রথম স্ত্রী কোশালা দেবী ছিলেন কোশলের রাজকুমারী, বিবাহ সূত্রে বিম্বিসার উপহার হিসেবে কাশী লাভ করেন। এই বিবাহের ফলে মগধ আর কোশলের মধ্যে যে দীর্ঘ শত্রুতা ছিল তা বন্ধুত্বে রূপান্তরিত হয়। রাজা বিম্বিসারের দ্বিতীয় স্ত্রী চেল্লানা ছিলেন বৈশালীর রাজা চেতকের কন্যা তথা লিচ্ছবী বংশের রাজকন্যা। বলাই বাহুল্য এই বিবাহ সূত্রে দু'টি প্রদেশের মধ্যে সখ্যতা দৃঢ় হয়েছিল।  বিম্বিসারের তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন পাঞ্জাবের মদ্র বংশীয় কন্যা ক্ষেমা। এইভাবে রাজা বিম্বিসার বিভিন্ন শক্তিশালী প্রদেশের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছিলেন। অঙ্গ প্রদেশটিও তিনি যুদ্ধের মাধ্যমে জয় করেছিলেন এবং পুত্র অজাতশত্রুকে সেই স্থানের  প্রধান (Governor/ গভর্নর) নিযুক্ত করেন। অঙ্গ প্রদেশ দখলের মাধ্যমে গঙ্গা নদীপথের উপর যে বন্দর ছিল, তিনি তার দখল পান এই জয় রাজা বিম্বিসারকে প্রভাবশালী করে তোলে। রাজা বিম্বিসারের সমকালীন এক বিদগ্ধ চিকিৎসক ছিলেন জীবক। যিনি স্বয়ং গৌতম বুদ্ধের এবং রাজা বিম্বিসারের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন। জীবক তক্ষশীলায় ঋষি আত্রেয় পুনর্বসুর নিকট সাত বৎসর চিকিৎসা শাস্ত্র অধ্যয়ন করেছিলেন। প্রাচীন ভারতবর্ষে উচ্চ শিক্ষার উৎকর্ষতার বহু নিদর্শন রয়েছে। ভারতবর্ষ যে উচ্চ শিক্ষার অন্যতম উর্বর পীঠস্থান ছিল তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, বিদ্বান ব্যক্তিবর্গ এবং তাঁদের সৃষ্টির মাধ্যমে বোঝা যায়। টাঙ্গা আপনাকে নিয়ে চলবে রাজা বিম্বিসারের ধনরাশি ভান্ডারের উদ্দেশ্যে, যা স্বর্ণ ভান্ডার বলে পরিচিত কত লোককথা প্রচলিত রয়েছে এই বিষয়ে। কথিত আছে, আজ পর্যন্ত এই বিপুল ধনরাশি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পথে দর্শন করে নিতে পারেন  মনিয়ার মঠ।  

অজাতশত্রু সিংহাসন আরোহন করে রাজত্ব করেন ৪৯১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৪৬১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ সময়কাল পর্যন্ত। তিনি রানী কোশালার পুত্র না রানী চেল্লানার পুত্র তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। অজাতশত্রুর জন্ম নিয়েও নানান কাহিনী বা লোককথা আজও প্রচলিত রয়েছে। রাজা বিম্বিসারের অন্তিম পরিণতি ছিল মর্মবিদারক। বৌদ্ধ মতে, পুত্র অজাতশত্রু তাঁকে সিংহাসনচ্যুত করেন, বন্দী করেন এবং হত্যা করেন। এই কারাগার, যা বিম্বিসার কারাগার বলে পরিচিত, আজ একটি দ্রষ্টব্য। বিজয়ীর অহংকারের অট্টহাস্য, বিজিতের লাঞ্ছনার নানা কাহিনী আজও গুঞ্জরিত হয় তার প্রাচীরে, প্রকোষ্ঠে। শোনা যায়, কারাগারে অবরুদ্ধ রাজা বিম্বিসার গৃদ্ধকুট শিখরে ধ্যানমগ্ন বুদ্ধদেব-কে প্রত্যক্ষ করে শান্তিলাভ করতেন। রোপওয়ে থেকে এই শিখরটি দেখা যায়, কেউ যদি শান্তিস্তূপ ট্রেল ধরে হেঁটে বিশ্বশান্তিস্তূপে যান তবে চলার পথে দেখে নিতে পারেন গৃদ্ধকুট শিখর হয়তো এই বেদনাদায়ক ঘটনার জন্যেই অজাতশত্রুর জন্মসংক্রান্ত অগৌরবের কাহিনী প্রচলিত। তবে আবার জৈন মতে রাজা বিম্বিসার আত্মহত্যা করেছিলেন। অজাতশত্রুর শাসনকালে হার্যঙ্ক বংশের সাম্রাজ্যের পরিধি বিস্তৃতিলাভ করে। তিনি সমগ্র গণ সংঘের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন, বৈশালী রাজ্য দখল করেন, প্রতিবেশী রাজ্যগুলিকে পরাস্ত করেন। অজাতশত্রুর দুর্গের স্থানটি আজ দ্রষ্টব্য। অজাতশত্রু রাজগৃহের পরিবর্তে রাজধানী চম্পাতে স্থানান্তরিত করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি পাটুলিপুত্র নগরী নির্মাণ করেছিলেন, এই নগরী হয়ে উঠেছিল ভারতবর্ষের ইতিহাসের এক প্রাণকেন্দ্র। রাজা অজাতশত্রু যুদ্ধে পারদর্শী ছিলেন, তবে কতটা আদর্শবাদী বা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছিলেন তা দ্বিধার অবকাশ রাখে। ৪১৩ খ্রিস্টপূর্বাদে হার্যঙ্ক বংশের অবসানের পরে শিশুনাগ বংশ এবং তার পরবর্তী সময়ে নন্দ বংশের উৎপত্তি হবে। তবে তা আবর্তিত হবে পাটলিপুত্র বা বর্তমানে যে স্থান পাটনা নামে পরিচিত তাকে কেন্দ্র করে।   

গৌতম বুদ্ধ এবং মহাবীর জৈন ছিলেন হার্যঙ্ক বংশের সমসাময়িক। বর্তমান রাজগীর শহরের থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সপ্তপর্ণী গুহা। ভগবান বুদ্ধ নির্বাণের পূর্বে কিছুকাল এই স্থানে অতিবাহিত করেছিলেন। গৌতম বুদ্ধের পরনির্বাণের পর প্রথম বুদ্ধিস্ট কাউন্সিল এই স্থানেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গৌতম বুদ্ধের দুই শিষ্য আনন্দ এবং উপালীকে উক্ত কাউন্সিলে বুদ্ধদেবের বাণী ও শিক্ষা পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে সংকলন করার অনুরোধ করা হয়। এখানে আসার পথে পড়বে জরাসন্ধের বৈঠকখানা, শ্বেতাম্বর জৈন মন্দির রাজগীর ভ্রমণের আর একটি আকর্ষণ রোপওয়ে, এর আকর্ষণ এতটাই ছিল যে আমরা দু'দিন রোপওয়ে-তে চড়েছিলাম রোপওয়ে-তে করে পৌঁছতে হয় রত্নগিরিতে অবস্থিত বিশ্বশান্তিস্তূপে। তখন সব ক'টি আসন ঘেরা এবং সামনে ধরবার হাতল ছিল না। কয়েকটি মাত্র ছিল এরূপ নিরাপদ। বাকি আসনগুলি ঘেরা ছিল না, একপাশে কেবলমাত্র একটি লোহার হাতল ছিল।  

এছাড়াও ঘুরে নিতে পারেন রাজগীর হেরিটেজ মিউজিয়াম, বেণুবন, মাখদুম কুন্ড, শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির, ব্রহ্মা কুন্ড, সূর্য কুন্ড, দিগম্বর জৈন মন্দির ইত্যাদি। যাঁরা বন্য প্রকৃতি ও বন্য প্রাণী ভালোবাসেন, তাঁদের জন্যে রাজগীরে রয়েছে বেশ কয়েকটি সাফারি, সময় ও সুযোগ মতন দেখে নিতে পারেন পন্ত ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারিটিও। তবে সেই যাত্রায় আমরা এগুলি দর্শন করিনি। পর্যটনস্থান হওয়ার দরুন রাজগীর শহরে ইতস্তত ছড়িয়ে রয়েছে অনেক ট্যুরিস্ট সার্ভিসের দোকান। এখন থেকেই পেয়ে যাবেন পাওয়াপুরী কিংবা নালন্দা ঘোরার বাস। আমরাও সেই মতন বাসে করেই ঘুরেছিলাম এই দু'টি স্থান। রাজগীর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত নালন্দা মহাবিহার, প্রাচীন ভারতবর্ষের উৎকর্ষতার এক অন্যতম উন্নত নিদর্শন। নন্দ (Nanda), মৌর্য (Maurya), শুঙ্গ (Shunga), কাণ্ব (Kanwa) ইত্যাদি বংশের অবসানের পর শুরু হয় গুপ্ত (Gupta) সাম্রাজ্য। শ্রীগুপ্ত এই সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। গুপ্ত সাম্রাজ্যের উল্লেখযোগ্য রাজন্যবর্গের মধ্যে রয়েছেন সমুদ্রগুপ্ত, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বা বিক্রমাদিত্য। বিক্রমাদিত্য পশ্চিমের ক্ষাত্রপদের পরাজিত করেন। পশ্চিমে সিন্ধু নদ থেকে পূর্বে বাংলা, উত্তরে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণে নর্মদা নদী পর্যন্ত তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলেন। শুধুমাত্র সাম্রাজ্য বিস্তার নয়, ইতিহাস তাঁকে স্মরণ করে একজন শিক্ষা ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও, তাঁর রাজসভা অলংকৃত করে যে নবরত্ন ছিলেন তা সর্বজন বিদিত। বিক্রমাদিত্যের পরে সিংহাসন আরোহন করেন প্রথম কুমারগুপ্ত।  প্রথম কুমারগুপ্ত পঞ্চম শতকে এই নালন্দা মহাবিহার প্রতিষ্ঠা করেন। আজকের এই ধ্বংসাবশেষ ছিল সেই যুগের একটি প্রধান অধ্যয়ন কেন্দ্র। পৃথিবীর ভিন্ন প্রান্ত থেকে পন্ডিত, শিক্ষাবিদরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতেন, থাকতেন এবং অধ্যয়ন করতেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন চীন থেকে ফা হিয়েন (৩৯৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৪১২ খ্রিস্টাব্দ ), হিউ  এন সাং (৬৩৭ থেকে ৬৪২ খ্রিস্টাব্দ), ইজিং (৬৭৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬৯৫ খ্রিস্টাব্দ), কোরিয়া থেকে হিয়ন জো (সপ্তম শতকের মধ্যভাগে), তিব্বত থেকে থন্মি সাম্ভটা (সপ্তম শতক) প্রমুখ। তাঁদের বর্ণিত এবং লিখিত দলিল থেকে এই মহাবিহার সম্বন্ধে জানা যায়।

বাংলায় তখন সেন বংশ (Sen) প্রবল পরাক্রমে রাজত্ব করছে। পাল বংশের (Pal) শেষ রাজা গোপালদেব পরাজিত হয়েছেন, রাজ্য থেকে পলায়ন করেছেন কিন্তু হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হয়েছেন। বল্লাল সেনের কৌলিন্য প্রথা প্রবর্তনে, ব্রাহ্মণ্য প্রথার বাড়বাড়ন্তে সমাজ কুসংস্কারের পঙ্কিলতায় ধীরে ধীরে নিমজ্জিত হচ্ছে, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী শ্রমণদের উপর নেমে আসছে অনাদর, বৌদ্ধমহাবিহারগুলি ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে।  মগধে অবস্থিত এই ওদন্তপুরী মহাবিহারে তখন বসেছে আলোচনা, তাতে উপস্থিত মাত্র তিনজন; বজ্রাচার্য, বৈশ্য বল্লভানন্দ শ্রেষ্টী আর বিজিত রাজা গোপালদেব। এ বর্ণনা শক্তিপদ রাজগুরুর 'লক্ষণাবতী' উপন্যাসে পাওয়া যায়। না, সেই যাত্রায় ওদন্তপুরী যাওয়া হয়নি আমাদের, তবে আশা করি, ভবিষ্যতে অবশ্যই কখনও সেই স্থান পরিদর্শন করার সুযোগ পাব। বাংলা পুনরুদ্ধার পাল বংশের আর সম্ভব হয়নি। ঘুরী সাম্রাজ্যের তুর্ক-আফগান সেনাপতি বখতিয়ার খিলজি এগিয়ে চলেছেন বাংলার দিকে, তিব্বত পর্যন্ত দখল করবেন তিনি, এমনই মনোবাসনা তাঁর। পথে ধ্বংস করে চলেছেন একের পর এক বৌদ্ধ মহাবিহারগুলি, ওদন্তপুরী, নালন্দা কেউই রেহাই পাইনি বিজয়ীর অন্ধ অহংকারে। স্থাপত্যগুলি মুহূর্তে পরিণত হয়েছে ধ্বংসাবশেষে, হাজার হাজার পুঁথি, প্রামাণ্য দলিল অগ্নির লেলিহান শিখায় মুহূর্তে পর্যবসিত হয়েছে ভস্মতে ভারতবর্ষের অমূল্য দলিলগুলি শেষ হয়ে গিয়েছে। ওদিকে লক্ষণ সেন পলায়ন করেছেন, বাংলায় স্থাপিত হয়েছে খিলজি বংশ।

তবে আমাদের ফেরাটা আর বক্তিয়ারপুর জংশন হয়ে নয়, আমরা গিয়েছিলাম বুদ্ধগয়া। ভগবান বুদ্ধের পাদপদ্ম স্পর্শ করে আমরা বিকেলে এসে পৌঁছেছিলাম গয়াতে। মনে পরে স্টেশনের বাইরে ছোট ছোট হোটেলগুলি; তাদের ভাত, রুটির পসরা, খদ্দের ধরার হাঁকডাক চোখ টেনেছিল, তবে আমরা তা খাইনি। গয়া স্টেশনে অপেক্ষারত অবস্থায় দেখলাম রাজধানী এক্সপ্রেস পাস করছে, দূরপাল্লার সব রেলগাড়ী লাল রঙের হয় না, রাজধানীর রঙ কমলা। রেলগাড়ির জন্যে অপেক্ষা করা, স্টেশনে বসে মুড়ি খাওয়া, বারবার রেলগাড়ির দেরীর ঘোষণায় ক্লান্ত হয়ে পড়া, অবশেষে অনেক রাত্রে রেলগাড়িতে চড়া এবং পরদিন হাওড়া পৌঁছনো, এভাবেই সেই যাত্রার পরিসমাপ্তি ঘটে।

পরিশেষে উল্লেখ করি, ইতিহাসের হাত ধরে এই স্থানটিকে তুলে ধরা আমার উদ্দেশ্য ছিলকাজেই সময়ানুসারে আমি দ্রষ্টব্যগুলি বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি। সময় ও সুযোগ অনুযায়ী পর্যটকরা তা পরিবর্তন করতেই পারেন। যেমন সাইক্লোপিয়ান দেওয়ালটি দেখে একটু হেঁটে অনতিদূরে অজাতশত্রুর দুর্গের স্থানটি দেখে নেওয়াই যায়, ইতিহাসের সময়কাল অনুযায়ী আমি এর পর যে জরাসন্ধের আখড়ার কথা উল্লেখ করেছি তা কিন্তু সাইক্লোপিয়ান দেওয়ালটির থেকে বেশ দূরে অবস্থিত। আর একটি দুঃখ প্রকাশ, আমি সর্বদা ব্লগে নিজের তোলা (সময় বিশেষে নিজেদের তোলা) ছবি ব্যবহার করে থাকি, উক্ত ভ্রমণের সময় আমাদের কোনো ক্যামেরা না থাকার দরুন কোনো ছবি আমার কাছে নেই। সেই কারণে ভ্রমণের কোনো ছবি দিতে পারলাম না। আশা করি নিকট ভবিষ্যতে এই স্থানে যাওয়ার সুযোগ হলে আমি ছবি দিতে পারবো। এখানে প্রদত্ত ভগবান বুদ্ধের চিত্রটি আমার স্ত্রী-র আঁকা।

১৯৯৫

আনদং-র জু-টোপিয়াম: পর্ব-২: সরীসৃপ প্রাণীদের একটি সংক্ষিপ্ত সরল বর্ণনা (Andong Zootopium: Part-2: A brief, simple description of reptiles)

 সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)

এর আগের পর্বে আমি আনদং-র জু-টোপিয়াম এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী সম্বন্ধে একটু সরলীকৃত বিবরণ দিয়েছি। সেটি পড়ার জন্যে ক্লিক করুন পর্ব-১

এবার একটু সরীসৃপ (Reptiles; class: Reptilia) প্রাণীদের দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক। আনদং-র চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ তাঁদের সংগ্রহে অনেক সরীসৃপ প্রাণী এখানে প্রদর্শনের জন্যে রেখেছেন।  সরীসৃপ বলতে সাধারণভাবে কচ্ছপ, টিকটিকি, গিরগিটি, সাপ, কুমির এসকল প্রাণীকে বোঝায়।  বর্তমানে অবলুপ্ত ডাইনোসরও কিন্তু এই সরীসৃপ শ্রেণীর অন্তৰ্ভূক্ত প্রাণীই ছিল। এই শ্রেণীর প্রাণীরা প্রথম সম্পূর্ণভাবে স্থলে বসবাস করতে শুরু করে।  একটু পরিষ্কার করে বলি, এর পূর্বে উভচর শ্রেণীর প্রাণীরা জীবনচক্রের বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যে কোনো পর্যায় জলে আবার কোনো পর্যায় স্থলে অতিবাহিত করে।  কিন্তু সরীসৃপ শ্রেণীর  অন্তর্গত প্রাণীরা এবার জল ছেড়ে স্থলে বসবাস করতে শুরু করে, এবং এ জন্যে প্রয়োজনীয় শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনও তাদের দেহে লক্ষ্য করা যায়। এরা ঠান্ডা রক্তের প্রাণী আর তাই সাধারণত একটু উষ্ণপ্রধান অঞ্চলে এদের দেখা যায়। এদের শরীরের চামড়ায় কোনো গ্রন্থি নেই, কারোর কারোর লিম্ব (Limb; হাত/পদ) থাকে, আবার কারোর কারোর থাকে না। যে সকল সরীসৃপের লিম্ব থাকে, তা সংখ্যায় দুই জোড়া এবং প্রতিটি পদ পাঁচটি আঙ্গুল বিশিষ্ট হয়ে থাকে। এদের কানের জায়গায় একটি ছোট ছিদ্র দেখতে পাওয়া যায়, যা টিমপ্যানাম (Tympanum) নাম পরিচিত, এবং সাধারণত এদের দেহে আঁশ (Scale) বর্তমান (তবে তা নানা প্রকারের) আশা করি সরীসৃপ সম্বন্ধে একটা সহজ ধারণা দিতে পারলাম। এই সকল সরীসৃপ ক্লাসটিকে বোঝার সুবিধার্থে কয়েকটি সাবক্লাসে বিভক্ত করা হয়ে থাকে, যা মূলত খুলির (Skull) গঠনের উপর ভিত্তি করে। এস্থানে আমরা জটিল বিষয়ের অবতারণা না করে সরলভাবে বোঝার চেষ্টা করবো এবং এই শ্রেণীর বহু প্রাণী বর্তমানে অবলুপ্ত, কাজেই সেই সকল প্রাণীর অবতারণা করে বিবরণটিকে দীর্ঘ করবো না  প্রথম সাবক্লাসটি হলো এন্যাপসিডা (Anapsida) যার অন্তর্গত অর্ডারটি চেলোনিয়া (Chelonia), গ্রিক শব্দ 'Chelone'-র অর্থ tortoise বা কচ্ছপ। কচ্ছপ বললেই সবাই ধারণা করতে পারে এদের শরীর একটি শক্ত খোলার মধ্যে থাকে (উপরের ডরসাল (Dorsal) দিকটি যে শিল্ড দিয়ে আবৃত তা ক্যারাপেস (Carapace) এবং ভেন্ট্রাল দিকটি যে প্লেট দিয়ে আবৃত তা প্লাসট্রন (Plastron) নাম পরিচিত), দেহটি উপবৃত্তাকার, দুই জোড়া পা বর্তমান আর তাতে পাঁচটি করে আঙ্গুল (Digits) আছে, জলচর (সামুদ্রিক) কচ্ছপের ক্ষেত্রে সামনের পা দু'টি প্যাডেলে অভিযোজিত হয়েছে, এদের দাঁত নেই কিন্তু চোয়ালে একধরণের হর্নি প্লেট বর্তমান, খুব ছোট একটি লেজ বর্তমান। শীতপ্রধান অঞ্চলে এরা ঠান্ডায় শীতঘুমে যায়।

এর পর আসি সাবক্লাস লেপিডোসাউরিয়া-য় (Lepidosauria) ‘Lepis’ কথার অর্থ Scale বা আঁশ আর ‘Squaros’ কথাটির অর্থ Lizard/ লিজার্ড। এই সাবক্লাসের অন্তর্গত দু'টি প্রধান অর্ডার হলো রিনকোসেফালিয়া (Rhynchocephalia) এবং স্কোয়ামাটা (Squamata) ‘Rhychos’ কথাটির অর্থ Beak বা চঞ্চু আর ‘Kephala’ কথাটির অর্থ মাথা।  এর উদাহরণ হলো স্ফেনোডন/ টুয়াটারা (Sphenodon/ Tuatara) এবার আসি স্কোয়ামাটা অর্ডারে। এর অর্থ আঁশযুক্ত, সকল লিজার্ড, আর সাপ এই অর্ডারভুক্ত প্রাণী। বৃহৎ এই অর্ডারটিকে কয়েকটি সাব-অর্ডারে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন ল্যাসেরটিলিয়া (Lacertilia), 'Lacerta' কথাটির অর্থ লিজার্ড। কাজেই সহজেই অনুমান করা যায় গেকো (Gekko), ড্রাকো (Draco), ক্যামেলিওন (Chamaeleon), মাবুয়া (Mabuya), ফ্যারিনোসোমা (Pharynosoma), হেমিড্যাকটাইলাস (Hemidactylus) ইত্যাদি এই সাব-অর্ডারের অন্তর্গত। 

এরপর সাব-অর্ডার অফিডিয়া (Ophidia) বা সারপেন্টেস (Serpentes)সকল প্রকার সাপ এই বিভাগের অন্তর্গত। পরবর্তী সাব-অর্ডারটি হলো এমফিসবেনিয়া (Amphisbaenia)ওয়ার্ম লিজার্ড (Worm lizard) এর উদাহরণ।

উষ্ণ প্রধান হওয়ার দরুন আমাদের দেশে সাপের উপস্থিতি লক্ষ্য করার মতন। গ্রাম বাংলায় সাপে কাটা, সাপে কাটায় মৃত্যু কথা প্রায়ই শোনা যেত, এখনও যায় তবে স্বাস্থ্য সচেতনতা, পরিকাঠামোর কিছুটা উন্নতি হওয়ায় কিছুটা কমেছে। এই সাপ নিয়ে প্রচুর কাহিনীও প্রচলিত রয়েছে , বলাই বাহুল্য অনেকাংশে তা অসত্য।  যেমন সাপের মাথায় কোনো মণি থাকে না, এ কেবলমাত্র কল্পনা। যাইহোক, এ প্রসঙ্গ যখন উত্থাপিত হলো তখন কয়েকটি তথ্য এখানে পরিবেশন করি। আমাদের পৃথিবীতে প্রায় তিন হাজার প্রজাতির সাপ রয়েছে এর মধ্যে কিন্তু অধিকাংশ নির্বিষ সাপ, বিষধর সাপ রয়েছে প্রায় ৬০০ প্রজাতির। এই নির্বিষ সাপগুলি আবার সব সময় ক্ষতিকর নয় এমনটা কিন্তু নয়, যেমন পাইথন (Python), বিষ না থাকলেও শিকারকে এরা পেঁচিয়ে দম বন্ধ করে মেরে ফেলে গিলে নেয়। আর যেগুলি বিষধর সাপ সেগুলির মধ্যে প্রায় ২০০ টি সাপ রয়েছে যাদের কামড়ে মানুষের ক্ষতি এমনকি মৃত্যু হতে পারে। কাজেই সাপে কাটলে সময় নষ্ট না করে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছনো উচিত।

আমরা প্রায়ই সাপকে তার দুইভাগে বিভক্ত জিহ্বাকে বার করতে দেখি, কেন তারা এটা করে? সাপের নাসারন্ধ্র (Nostril) বর্তমান। এটি শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজে এবং গন্ধ অনুভবের জন্যে ব্যবহৃত হয়। বারবার জিহ্বাকে বার করে সাপ আশপাশের বায়ুমণ্ডল থেকে রাসায়নিক পদার্থের কণা সংগ্রহ করে, তারা যখন জিহ্বাকে মুখের ভিতরে ঢোকায় তখন তাতে লেগে থাকে কণাগুলি অলফ্যাক্টরি (Olfactory) সেন্টারে, যা জ্যাকবসন'স অর্গান (Jacobson’s organ) নাম পরিচিত, যায় এবং বিশ্লেষিত হয়। এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে তারা আশেপাশে কোনো খাদ্য রয়েছে কিনা বা পরিবেশ নিরাপদ কিনা তা বুঝতে পারে। চোখের সামনে অবস্থিত পিট হোলের (Pit holes) মাধ্যমে উষ্ণ রক্তের প্রাণী থেকে বেরিয়ে আসা উষ্ণ তরঙ্গকে অনুভব করতে পারে। আবার নিচের চোয়াল স্থিত হাড়গুলি ছোট স্তন্যপায়ী রোডেন্ট ইত্যাদি প্রাণীদের চলাফেরায় যে কম্পন উৎপন্ন হয় তা উপলব্ধি করতে পারে। এইভাবে তারা শিকার ধরে।  সাপের কানের পর্দা (Eardrum) নেই, তবে তাদের অন্তঃকর্ণের (Inner ear) সুগঠিত, ককলিয়া (Cochlea) বর্তমান এবং অন্তঃকর্ণ চোয়ালের হাড়গুলির সাথে সংযুক্ত।  কম্পন অনুভবের মাধ্যমে এরা শুনতে পায়।

এবার একটু সাপের বিষদাঁতের (Fang) কথায় আসা যাক।  সাপেদের প্রায় ১৫ টি ফ্যামিলি রয়েছে কিন্তু তার মধ্যে বিষধর সাপের মাত্র পাঁচটি ফ্যামিলির অন্তর্গত। এরা ভাইপারিডি (Viperidae), এট্রাকটাসপিডিডি (Atractaspididae), ইলাপিডি (Elapidae), কলুব্রিডি (Colubridae) এবং হোমালোপসিডি (Homalopsidae)  ভাইপারিডি (রাটেল স্নেক (Rattlesnake), ভাইপার (Viper), পিট্ ভাইপার (Pit viper)) এবং এট্রাকটাপিডিডি (মোল ভাইপার (Mole viper), স্টিলেটো স্নেক (Stiletto snakes)) ফ্যামিলির সাপেদের বিষদাঁতটি বেশ লম্বা নলাকার, এবং এর আগায় একটি ছিদ্র থাকে যা দিয়ে বিষ শিকারের শরীরে প্রবেশ করে। ইলাপিডি ফ্যামিলির সাপেদের, যাদের মধ্যে রয়েছে কোবরা, মাম্বা, সামুদ্রিক স্নেক, বিষদাঁতটি তুলনায় একটু ছোট, নলাকার এবং চোয়ালের সাথে ভালোভাবে যুক্ত, এবং এর আগায় ছিদ্র থাকে যা দিয়ে বিষ শিকারের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দেয় কলুব্রিডি (সর্ববৃহৎ ফ্যামিলি, বুমস্ল্যাং (Boomslang), ট্রি-স্নেক (Tree sanke) এদের উদাহরণ) এবং হোমালোপসিডি (ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান জলের সাপগুলি এদের উদাহরণ) ফ্যামিলিভুক্ত সাপগুলির বিষদাঁত মুখের পিছনের দিকে থাকে এবং এতে একটি গ্ৰুভ দেখা যায়। এবার যদি বিষের রাসায়নিক ক্রিয়ার উপর দৃষ্টিপাত করা যায়, তবে দেখা যাবে সাপের বিষ সাধারণত তিন প্রকারের হয়ে থাকে।  সাধরণত, কিছু ব্যতিক্রম থাকলেও, ভাইপারিডি, এট্রাকটাপিডিডি সাইটোটক্সিক (Cytotoxic; কোষের জন্যে বিষাক্ত), ইলাপিডি নিউরোটক্সিক (Neurotoxic; নার্ভের জন্য বিষাক্ত), কলুব্রিডি এবং হোমালোপসিডি হিমোটক্সিক (Hemotoxic; রক্তের কোষের জন্যে বিষাক্ত) বিষ নির্গত করে।

অপর গুরুত্বপূর্ণ সাব-ক্লাসটি হলো আর্কোসাউরিয়া (Archosauriya) যার অন্তর্গত অর্ডারটি ক্রোকোডিলিয়া (Crocodilia) বা লোরিক্যাটা (Loricata) কুমির (Crocodile), ঘড়িয়াল (Ghorial), এলিগ্যাটার (Alligator) এর উদাহরণ। এই ছোট চিড়িয়াখানাটিতে কোনো কুমির বা এলিগ্যাটার রাখা নেই, তবে আমাদের দেশে এদের প্রাচুর্য্য রয়েছে।

 আশা করি সরীসৃপ প্রাণীদের সম্বন্ধে একটা সাধারণ ধারণা দেওয়া গেলো।

কৃতজ্ঞতা: এই বিবরণেও ব্যবহৃত ছবিগুলির অধিকাংশ আমার স্ত্রীর তোলা, তাঁর থেকে সেগুলি আমি সংগ্রহ করেছি। 

সেপ্টেম্বর, ২০২১

আনদং-র জু-টোপিয়াম: পর্ব-১: স্তন্যপায়ী প্রাণীদের একটি সংক্ষিপ্ত সরল বর্ণনা (Andong Zootopium: Part-1: A brief, simple description of mammals)

সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)

আনদং-এ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্নিকটে, ১০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যেই একটি ছোট চিড়িয়াখানা রয়েছে। আমরা সপ্তাহান্তে (সপ্তাহান্তে বেড়ানো-র কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা পড়ার জয়ে ক্লিক করুন সপ্তাহান্তে বেড়ানো) প্রায়ই সেখানে যাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের বিভাগে যে বাৎসরিক কীট-পতঙ্গ, ও অন্যান্য ছোট প্রাণীদের নিয়ে প্রদর্শনী আয়োজিত হয়, সেখানে প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে কিছু প্রাণী এখান থেকে কখনও নেওয়া হয়। অনেক প্রাণী রয়েছে এখানে যেগুলি আমি আগে কখনো দেখনি আবার অনেকগুলি বেশ পূর্বপরিচিত। এই স্থানটিতে শুধুই যে ক্যাপটিভিটিতে (Captivity) রাখা কিছু প্রাণীর প্রদর্শনী তা নয়, সেগুলি সম্বন্ধে মানুষকে, বিশেষত বাচ্চাদের অবহিত করেন এখানকার কর্মীবৃন্দ।এখানে আমি স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বিষয়ে একটি বিবরণ লিখছি, এবং এখানে রাখা কয়েকটি স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ছবি দিচ্ছি। American Society of Mammalogists-র ম্যামাল ডাইভার্সিটি ডাটাবেস (Mammal Diversity Database) অনুযায়ী পৃথিবীতে বর্তমানে ৬৪৯৫ টি জীবিত প্রজাতির (Species) স্তন্যপায়ী প্রাণী (মোট ৬৫৯৬ প্রজাতি, অবলুপ্ত হয়ে গেছে ১০১ টি প্রজাতি) রয়েছে। বলাইবাহুল্য প্রতিটি প্রজাতি সম্বন্ধে এক এক করে জানা অল্পসময়ে অসম্ভব, কাজেই এদের শারীরিক বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে এদের কয়েকটি বিজ্ঞানসম্মত ভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। এতে সহজে এদের সম্বন্ধে একটি ধারণা পাওয়া যায়। 

কর্ডাটা (Chordata) পর্বভূক্ত স্তন্যপায়ী (Mammals; Class: Mammalia) প্রাণী আমাদের সকলের পরিচিত।  যেমন মানুষ, গরু, ছাগল, ভেড়া, কুকুর, বিড়াল যা আমরা প্রত্যহ আমাদের আশেপাশে দেখে থাকি, এরা সকলেই স্তন্যপায়ী প্রাণী।  সাধারণভাবে যাদের দেহে লোম বর্তমান, এবং স্তন গ্রন্থি বিদ্যমান তাহারা সকলে স্তন্যপায়ী ক্লাসভুক্ত প্রাণী। স্তন্যপায়ী ক্লাসটিকে দু'টি সাবক্লাসে বিভক্ত করা হয়, যথাক্রমে প্রোটোথেরিয়া (Prototheria) এবং থেরিয়া (Theria)যেসকল স্তন্যপায়ী প্রাণী ডিম পাড়ে তাহারা প্রোটোথেরিয়ার (অর্ডার-মনোট্রিমাটা (Monotremata)) অন্তর্গত, যেমন Ornithorhynchus, Tachyglossus, Echidnaঅপরপক্ষে যে সকল স্তন্যপায়ী প্রাণী বাচ্চা প্রসব করে তাহারা থেরিয়া সাবক্লাসভুক্ত। থেরিয়া দু'টি ইন্ফ্রাক্লাসে বিভক্ত, যথা মেটাথেরিয়া (Metatheria) এবং ইউথেরিয়া (Eutheria)মেটাথেরিয়ারা অপরিণত বাচ্চা প্রসব করে যারা প্রসবের পরে মায়ের দেহে মারসুপিয়ামের (Marsupium: বাচ্চা ধারন করার থলি) মধ্যে পরিণত হয়। মেটাথেরিয়া ইন্ফ্রাক্লাসের একটি অর্ডার রয়েছে, যা মার্সুপিলিয়া (Marsupilia) নামে পরিচিত। ক্যাঙ্গারু (Kangaroo), উম্ব্যাট (Wombat), কোয়ালা (Koala bear), ব্যান্ডেড এন্ট ইটার (Banded ant eater), অপসাম (Opossum) ইত্যাদি এই অর্ডারভুক্ত প্রাণী। এরপর আসি ইউথেরিয়া-তে, এরা পরিণত বাচ্চা প্রসব করে, এটি বৃহৎ ইন্ফ্রাক্লাস যা সাধারণত চারটি কোহর্ট-এ বিভক্ত। কোহর্টগুলি যথাক্রমে আঙ্গুইকিউল্যাটা (Unguiculata: যাদের আঙুলে নখ বা ক্ল’ (Claw) বর্তমান), গ্লাইআরিস (Glires: যাদের দাঁত চিবানোর উপযোগী, হাতে পাঁচটি আঙ্গুল বর্তমান), মিউটিকা (Mutica: এদের ভোকাল কর্ড অনুপস্থিত, এবং জলে জীবন অতিবাহিত করে, যেমন তিমি), এবং ফেরুঙ্গুল্যাটা (Ferungulata: মাংসাশী এবং খুরযুক্ত প্রাণী)।

এবার একটু বিভিন্ন কোহর্ট-র অন্তর্গত অর্ডারগুলির দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক। সব থেকে বড় অর্ডারটি হলো রোডেনশিয়া (Rodentia), যা Glires কোহর্ট-এর অন্তর্গত। এদের উপর এবং নিচের মাড়িতে এক জোড়া তীক্ষ্ণ ইনসিজার (Incisors) দাঁত রয়েছে, এটিই এই অর্ডার-এর প্রাণীদের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। ইঁদুর (Rat, Mouse), কাঠবেড়ালি (Squirrel), চিপমাঙ্ক (Chipmunk), প্যাটাগোনিয়া মারা (Patagonian mara)  ইত্যাদি এর অন্তর্গত। 


এছাড়াও প্রেইরি ডগও (Prairie Dog) এই অর্ডারের অন্তর্গত।

প্যাটাগোনিয়ান মারা (Patagonian mara: Dolichotis patagonum) এদের সংগ্রহে ছিল, যদিও এবারে তাদের দেখলাম না, হয়তো ভিতরের দিকে থাকবে। প্যাটাগোনিয়ান মারা -র বাসস্থান আর্জেন্টিনা। এরা বিভিন্ন ধরণের ঘাস, ফল, ইত্যাদি খায়।

এই কোহর্ট-র অপর অর্ডারটি হলো লোগোমর্ফ (Logomorph), এদের উপরের মাড়িতে দুইজোড়া (অসমান) ইনসিজার দাঁত রয়েছে, কিন্তু নিচের মাড়িতে একজোড়া ইনসিজার দাঁত রয়েছে। খরগোশ এই অর্ডারভুক্ত প্রাণীদের উদাহরণ।      

দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্ডারটি হলো Unguiculata কোহর্টভুক্ত  কাইরোপটেরা (Chiroptera), এদের সামনের বাহুদুটি ডানায় অভিযোজিত হয়েছে, বাঁদুড় এই অর্ডারভুক্ত প্রাণী। সরিকোমরফা (Soricomorpha), যা পূর্বে ইনসেক্টিভোরা (Insectivora: এদের খাদ্য কীট পতঙ্গ) নামে পরিচিত ছিল। এই অর্ডারটির প্রাণীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শৃউ (Shrew), মোল (Mole), হেজহগ (Hedgehog) ইত্যাদি। হেজহগ রয়েছে এঁদের সংগ্রহে, প্রাণীটিকে হাতে নিয়ে আদর করতে করতে তার ছবিটি তুলতেই ভুলে গেছিলাম। কাজেই এখানে ছবিটা দিতে পারলাম না। হেজহগের একাধিক গণ রয়েছে, যেমন Atelerix, Erinaceus, Hemiechinus, Mesechinus, Parachinusএরা প্রধানত নিশাচর। এরা  কীট -পতঙ্গশামুক, ব্যাঙ, সাপ, পাখির ডিম, মাশরুম, ঘাস, গাছের মূল, মেলন, তরমুজ, বেরী ইত্যাদি খাদ্য খায়। 

এছাড়াও এই কোহর্ট-র অন্তর্গত রয়েছে ডার্ম্পটেরা (Dermoptera; Derme = চামড়া, Pteron = ডানা; ফ্লাইং লেমুর (Flying Lemur) এর উদাহরণ), এডেনটাটা (Edentata; E/Ex = ব্যাতি/ ছাড়া, Den= দাঁত; আর্মাডিলো (Armadillo), শ্লথ (Sloth) এর উদাহরণ), ফলিডোটা (Pholidota; Pholis = স্কেল/আঁশ; প্যাঙ্গোলিন (Pangolin) এর উদাহরণ), প্রাইমেট (Primate; মানুষ, বাঁদর, গরিলা, শিম্পান্জী ইত্যাদি এর উদাহরণ)

ফেরুঙ্গুল্যাটা কোহর্ট-টি আবার পাঁচটি সুপার অর্ডার-এ ভাগ করা যায়। যেমন ফেরে (Ferae), প্রোটাঙ্গুল্যাটা (Protungulata; তৃণভোজী এবং খুরযুক্ত), পিনাঙ্গুল্যাটা (Paenungulata; তৃণভোজী এবং নখযুক্ত ডিজিট বা আঙ্গুল রয়েছে), মেস্যাক্সনিয়া (Mesaxonia), প্যারাক্সনিয়া (Paraxonia) Ferae-র অন্তর্গত কার্নিভোরা (Carnovira; Carno = মাংস,  Vorvo = খাওয়া; কুকুর, শিয়াল, বিড়াল, বাঘ, সিংহ, লেপার্ড, জাগুয়ার, ওয়ালরাস (Walrus), সি-লায়ন (Sea lion), রাকুন (Racoon), পান্ডা (Panda), মঙ্গুস (Mongoose), মির্ক্যাট (Meerkat) ইত্যাদি এর উদাহরণ)  

এখানে রয়েছে রাকুন। কাচের নির্মিত খাঁচায় রাখা রয়েছে। সাদা রঙের রাকুনও রয়েছে চিড়িয়াখানাটিতে।রাকুনের (Procyon lotor) মূল বাসভূমি উত্তর আমেরিকা। এরা নিশাচর এবং ওমনিভর (Omnivore = আমিষ, নিরামিষ সকল প্রকার খাদ্য খায়)


চোখ টানবে মিরক্যাট। দক্ষিণ আফ্রিকা এদের মূল বাসস্থান। মিরক্যাট (Suricata suricatta) সমাজবদ্ধ অবস্থায় বিচরণ করে। এক একটি দলে প্রায় ত্রিশটি পর্যন্ত মিরক্যাট সদস্য থাকে। 

এছাড়াও এখানে ছিল মার্বেল ফক্স (Marble fox), একেবারে দুধ সাদা রঙের। এই ব্রিডটি কিন্তু প্রকৃতিতে হয় না, রেড (Red fox) আর সিলভার ফক্স-র (Silver fox) মিলনে মার্বেল ফক্স হয়।  

প্রোটাঙ্গুল্যাটা-র অন্তর্গত অর্ডার টুবুলিডেন্টাটা (Tubulus = ছোট টিউব, Dens = দাঁত; আৰ্দ্ভাক (Ardvark) এর উদাহরণ) পিনাঙ্গুল্যাটা-র অন্তর্গত হাইরাকয়দি (Hyracoidea; Hyrax = শৃউ/ Shrew, Eides = form; Hyrax এর উদাহরণ), প্রোবোসিডি  (Proboscidea; স্থলে বসবাসকারী সব থেকে বৃহৎ প্রাণী, হাতি এর উদাহরণ), সিরেনিয়া (Sirenia; Siren = sea nymph; সি কাউ (Sea cow) এর উদাহরণ)

মেস্যাক্সনিয়া, প্যারাক্সনিয়া -র অন্তর্গত অর্ডার দু'টি যথাক্রমে পেরিসোড্যাকটাইলা (Perissodactyla; Perissos = odd; Daktylos = finger; Odd-toed hoofed mammals; তাপির, গন্ডার, ঘোড়া, গাধা, জেব্রা এর উদাহরণ) এবং আরটিওড্যাকটাইলা (Artiodactyla; Artios = even; Daktylos = finger; Even-toed hoofed mammals; জলহস্তী, শুয়োর, উট, হরিণ, ছাগল, গরু, ভেড়া, ইত্যাদি এর উদাহরণ)

চিড়িযাখানটিতে প্রবেশের সাথে সাথেই চোখে পড়বে আলপাকা। দক্ষিণ আমেরিকায় আলপাকা-র (Alpaca: Lama pacos) বাসভূমি, এদের আদি বাসস্থান পেরুতে। এরা আরটিওড্যাকটাইলা-র অন্তর্গত। প্রধানত উঁচু টেম্পারেট অঞ্চলে এদের বাস। এদের খাদ্যবস্তু মূলত ঘাস।  ভেড়ার লোম থেকে যেমন পশমের বস্তু প্রস্তুত করা হয়, ঠিক তেমন আলপাকা-র লোম থেকেও নানা পোশাক প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।

আশা করি স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সম্বন্ধে একটা সাধারণ ধারণা দেওয়া গেলো।

কৃতজ্ঞতা: এই বিবরণে ব্যবহৃত ছবিগুলির অধিকাংশ আমার স্ত্রীর তোলা, তাঁর থেকে সেগুলি আমি সংগ্রহ করেছি। 

সেপ্টেম্বর, ২০২১

রাজমহল: পর্ব-২ (Rajmahal: Part-2)

সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)  রাজমহল: পর্ব-১  -র পর- ঘুম ভাঙলো প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের শব্দে। বাইরে তখন খুবই কুয়াশা, হোটেলের ঘরের কাঁচের ...