পৃষ্ঠাসমূহ

জোয়ারের সুজি (Sorghum Semolina)

সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh) 

মিলেটের পুষ্টিগুণ পূর্বেই  (পর্ব-২: মিলেট) আলোচিত হয়েছে।   

পূর্বের ব্লগটিতে জোয়ারের খিচুড়ির প্রস্তুত করার পদ্ধতি সম্বন্ধে বর্ণনা করা হয়েছে (জোয়ারের খিচুড়ি)। জোয়ারের আটা থেকেও বেশ কিছু সুস্বাদু আর পুষ্টিকর খাদ্য প্রস্তুত করা যায়। জোয়ারের আটা বাজার থেকে ক্রয় করা যায় আবার জোয়ারের শস্যদানা থেকে তা সহজেই বাড়িতে তৈরী করে নেওয়া যায়। প্রথমে সেই পদ্ধতিটি সম্বন্ধে বলা যাক।  

প্রয়োজন মতন জোয়ার (শস্যদানা) নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।  তারপর একটি থালায় তা পাতিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে।  সূর্যালোকেও শুকিয়ে নিতে পারেন তবে খেয়াল রাখবেন ধুলোবালি যেন থালায় এসে না পরে। যদি তা সম্ভব না হয় তবে এমনিতেই রান্না ঘরে একটি পরিষ্কার জায়গায় তা রেখে দিন, দু-এক দিনে তা শুকিয়ে যাবে। 

এরপর মাইক্রোওয়েভে (৭০০W) মিনিট খানেক গরম করে তা ঠান্ডা করে নিতে হবে (সূর্যালোকে ভালোভাবে শুকালে মাইক্রোওয়েভে পুনরায় শুকিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন নেই)। অতঃপর গ্রাইন্ডারে দানাগুলি পিষে আটা তৈরী করে নিতে হবে। গ্রাইন্ডারে দানাগুলি পেশার ফলে সেগুলি ভেঙে গুঁড়ো হয়ে আটায় পরিণত হবে, তবে ভাঙা দানাগুলি পরিমাপ এক হবে না, কাজেই তা চেলে (সুক্ষ্ম চালুনির সাহায্যে) মিহি আটা আলাদা করে নিতে হবে, পুনরায় বাকি দানাগুলিকে ঘুরিয়ে একই পদ্ধতি অনুসরণ করে আটা চেলে নিতে হবে। হাওয়া না ঢোকে এমন পাত্রে আটা সযত্নে তুলে রাখুন। দুইবার এইভাবে দানাগুলি গুঁড়ো করে চেলে নেওয়ার পর কিছু দানা পরে থাকবে, যা আয়তনে মিহি আটার থেকে কিছুটা বড়, এগুলিকেও হাওয়া না ঢোকে এমন পাত্রে সযত্নে রেখে দিতে হবে। এগুলি দিয়ে সুজি প্রস্তুত করা যেতে পারে যা সুস্বাদু তো বটেই আর পাশাপাশি জোয়ারের পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। এটি একটি প্রাকৃতিকভাবে গ্লুটেন-ফ্রি (Gluten free) উন্নত উপকরণ। 

গ্রাইন্ডারে দানাগুলি পিষে আটা তৈরী করার সময়ে একটি সুমিষ্ট ঘ্রান অনুভূত হবে যা সত্যই একটি উপরি পাওনা বলে ধরতে পারেন।

জোয়ারের ক্ষুদ্র দানাগুলিকে প্রথমে শুকনো খোলায় একটু ভেজে নিতে হবে। তারপর ঘি বা তেলে (সাধারণভাবে ঘি বা তেল কোনোটিরই অধিক ব্যবহার কাম্য নয়) সামান্য নুন সহযোগে আর একটু ভেজে নিতে হবে। 

এরপর প্রয়োজন মতন জল (১০০ গ্রাম দানার জন্যে তিন থেকে চার কাপ জল লাগবে) দিয়ে ১২-১৫ মিনিট ফুটিয়ে নিয়ে হবে, এই সময় কাজু, কিশমিশ ইত্যাদি যোগ করতে পারেন। দানা গুলি নরম হয়ে এলে স্বাদ অনুযায়ী চিনি যোগ করুন। চিনি যোগ করার সময় স্বাদ নিয়ে দেখুন আপনার স্বাদ অনুসারে উপযুক্ত হচ্ছে কিনা, সেই মতন চিনি ব্যবহার করুন। এবার কিছুক্ষন ঢাকা দিয়ে রাখুন। জোয়ারের সুজি প্রস্তুত।  

মিলেটের ব্যবহার আপনার আহারের তালিকাকে প্রসারিত করবে এবং আপনার খাদ্য পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ হবে।

জোয়ারের খিচুড়ি (Sorghum Khichudi)

সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)


আমরা প্রায়ই খিচুড়ি খেয়ে থাকি। খিচুড়ির প্রধান উপকরণ চাল আর ডাল, এর সাথে কিছু সব্জি যোগ করে বেশ সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর  এই খাদ্যটি  প্রস্তুত করা হয়। একসময় বর্ষণমুখর দিনে যে উপাদেয় বস্তুটি পাতে পড়লে মন আহ্লাদে আটখানা হয়ে যেত, বর্তমান ব্যস্ত জীবনে তা একটি অপরিহার্য খাদ্য হয়ে উঠেছে। তবে খিচুড়িতে যদি চালের বদলে কখনও কখনও মিলেট ব্যবহার করা যায়, তবে এর পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পেতে পারে আবার একটু মুখের স্বাদ বদল করলে ভালোও লাগে। সাবুদানার বা ওটের খিচুড়ি এখন খুব পরিচিত। এই ব্লগটিতে আমি জোয়ায়ের খিচুড়ি প্রস্তুত করা নিয়ে আলোচনা করব। 

মিলেটের পুষ্টিগুণের বিষয়ে পড়ুন, পুষ্টি সুরক্ষা এবং খাদ্য সংস্থান- পর্ব-২: মিলেট

জোয়ারের খিচুড়ির প্রধান উপাদান দুটি হলো জোয়ার আর ডাল।  পরিবারের সদস্য সংখ্যার উপর নির্ভর করে যতটা জোয়ার নিতে হবে, ডালের পরিমান হতে হবে তার অর্ধেক। যেদিন এটি রান্না করা হবে তার পূর্বের দিন জোয়ার সারারাত (প্রায় ৮-১০ ঘন্টা) ভিজিয়ে রাখতে হবে। 

পরদিন সেই ভেজানো জোয়ার প্রেসার কুকারে প্রায় ৮ থেকে ১০ টি সিটি দিয়ে উপযুক্তভাবে সিদ্ধ করে নিতে হবে। 

মসুর বা মুগ যে কোনো ডাল-ই ব্যবহার করা যেতে পারে। ডাল ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। সব্জির মধ্যে ব্যবহার করতে পারেন কড়াইশুঁটি, ফুলকপি, গাঁজর, কুমড়ো, টমেটো, বেল-পেপার বা ক্যাপসিকাম ইত্যাদি। সব্জিগুলি ধুয়ে কেটে নিতে হবে, কড়াইশুঁটি ছাড়িয়ে নিতে হবে। পেঁয়াজ কেটে নিতে হবে, কাঁচালঙ্কা কুঁচিয়ে নিতে হবে, আদা আর রসুন বেটে নিতে হবে। 

এবার কড়াইতে তেল দিয়ে একটু উষ্ণ হলে তাতে জিরা, ধনে, পেঁয়াজ, আদা বাটা, রসুন বাটা, কুঁচোনো কাঁচালঙ্কা দিয়ে একটু নাড়িয়ে নিতে হবে। মিনিট দুয়েক নাড়িয়ে তার মধ্যে কেটে রাখা সব্জিগুলি দিয়ে একটু ভেজে নিন, পরিমান (স্বাদ অনুযায়ী) মতন নুন এবং হলুদ যোগ করুন। এরপর এর মধ্যে ডাল আর সিদ্ধ করে রাখা জোয়ার দিয়ে ভালোভাবে মিনিট পাঁচেক নাড়তে হবে। পরিশেষে জল দিয়ে সমস্ত উপকরণগুলিকে সিদ্ধ হতে দিন। আঁচ কমিয়ে মিনিট পনেরো কড়াইটিকে ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে, প্রস্তুত হয়ে যাবে জোয়ারের খিচুড়ি।  

জোয়ারের খিচুড়ির সাথে রায়তা, আঁচার, পাঁপড় ভালো সহযোগী হিসেবে কাজ করে। জোয়ারের দানাগুলি একটু মোটা এবং রুক্ষ, চালের মতন অতটা মসৃন নয়, এটি খাওয়ার সময় উপলব্ধি করতে পারেন। নতুন স্বাদ উপভোগ করুন। সকল খাদ্যশস্যকেই আহারে স্থান দিন, ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সকলকেই ব্যবহার করুন, খাদ্য বৈচিত্র্য বাড়লে, পুষ্টির মান উন্নত হবে। 

পুষ্টি সুরক্ষা এবং খাদ্য সংস্থান- পর্ব-২: মিলেট (Nutrition security and food - Part-2: Millet)

 সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)

পূর্বের পর্বটি পড়ার জন্যে ক্লিক করুন পর্ব-১

ভারতবর্ষ ২০২৩ সালকে আন্তর্জাতিক মিলেট বৎসর হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব করেছিল, যা ফুড এবং এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (Food and Agriculture Organisation of United Nations) ও জাতিসংঘের (United Nations) সাধারণ পরিষদ অনুমোদন করেছে (FAO events)। আমরা এই পর্বে আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে মিলেট নিয়ে আলোচনা করবো

মিলেটের ব্যবহার ভারতবর্ষে কিন্তু আজকে নতুন নয়,বরং খাদ্যশস্য হিসেবে এর ব্যবহার প্রায় ৫০০০ বছর পুরোনো। খাদ্য হিসেবে এর ব্যবহারের উল্লেখ সিন্ধু সভ্যতার সময়কালের বিভিন্ন পর্যায়ে পাওয়া যায়, বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মাধ্যমে তা আমাদের সামনে উঠে এসেছে। তৎকালে গম এবং বাৰ্লির ব্যবহার যে হতো তা ভালোভাবে নথিভুক্ত, কিন্তু মিলেট ব্যবহারের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি প্রথম পর্যায়ে ভালোভাবে নথিভুক্ত করা হয়নি, কিন্তু বর্তমানে জানা যায় মিলেট শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ শস্যই ছিল না বরং কোনো কোনো অঞ্চলে তা প্রধান শস্যদানা হিসেবে বিবেচিত হতো (Weber and Kashyap, 2016)।প্রারম্ভিক হরপ্পা সভ্যতা থেকে পরিণত এবং পরবর্তীতে অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে হরপ্পা সভ্যতার নানান স্থানে জোয়ার সহ নানান মিলেটের ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া যায় (Pokharia et al., 2014)। 

মিলেট উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে এগুলির ব্যবহার অত্যন্ত সীমিত হয়ে পড়েছে। মূলত যে সকল মিলেট ভারতবর্ষে পাওয়া যায় সেগুলি হলো  জোয়ার (Sorghum)বাজরা (Pearl millet),  রাগি (Finger millet)কোদো (Kodo millet)কুটকি (Little millet)কাকুম (Foxtail millet)সাংবা (Barnyard millet)চিনা (Proso millet) ইত্যাদি (Rao et al., 2018)। ভারতবর্ষে এইসকল মিলেটকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করার রীতি রয়েছে। মধ্যপ্রদেশে অধ্যাপনাকালে গবেষণার কাজে বাইগা (Baiga) এবং গোন্ড (Gond) জাতির কয়েকটি গ্রামে ঘুরেছিলাম। কোদো এবং কুটকি তাঁদের প্রধান খাদ্যশস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। বাইগা মানুষ হাল দিয়ে মাটি কর্ষণ করেন না কারণ তাঁরা ভূমিকে মাতা রূপে গণ্য করেনকাজেই মায়ের গায়ে আঘাত লাগে (হলকর্ষণে ভূমি মাতা আঘাত পাবেন) এমন কিছু করেন না। ভূমি পরিষ্কার করে তাঁরা বীজ ছড়িয়ে দেনআর তা থেকে গাছ হয়এরূপ চাষাবাদ 'বেওয়ার' ('Bewar') নামে পরিচিত (Guha, 1996)।

Table 1: ভারতবর্ষে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রকার মিলেট শস্য

ইংলিশ নাম

বিজ্ঞানসম্মত নাম

বাংলা/স্থানীয় নাম

Barnyard millet

Echinochloa frumentacea

সাংবা/শ্যামা

Finger millet

Eleusine coracana

রাগি/মারবা

Foxtail millet

Setaria italica

কাকুম/কাওন

Kodo millet

Paspalum scrobiculatum

কোদো

Little millet

Panicum sumatrense

কুটকি/সামা

Pearl millet

Pennisetum glaucum

বাজরা

Proso millet

Panicum miliaceum

চিনা

Sorghum

Sorghum bicolor

জোয়ার


সত্তরের দশকে ভারতবর্ষে সবুজ বিপ্লব সংগঠিত হয়। বলাই বাহুল্য এর ফলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছিল, দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছিল অনেকটাই। আজ যে ভারত তার প্রয়োজনীয় খাদ্য নিজেই উৎপাদন করতে পারে আর এ ব্যাপারে অন্য দেশের উপর বিশেষ নির্ভরশীল নয় তা অবশ্যই দেশের অগ্রগতিকেই প্রকাশ করে। তবে সবুজ বিপ্লব অধিক উৎপাদনশীল শস্য-র উপর মনোনিবেশ করায় ধান, গমের চাষ এবং উৎপাদন যেমন বৃদ্ধি পেয়েছিল, অপরপক্ষে জোয়ারবাজরা (Pearl millet)রাগি (Finger millet), স্মল মিলেট, বাৰ্লি ইত্যাদির চাষ অনেকটাই কমে যায় (Nelson et al., 2019)। ১৯৬১ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত কৃষি জমির আয়তনের দিক থেকে দেখলে দেখা যাবে, ধান, গম আর ভুট্টার চাষের জমির আয়তন বৃদ্ধি পেয়েছে, অপরপক্ষে বার্লি, মিলেট আর জোয়ারের চাষের জমি হ্রাস পেয়েছে (Figure 1)। উৎপাদনের তথ্যের প্রতি দৃষ্টিপাত করলেও দেখা যাবে বাৰ্লি বা জোয়ারের উৎপাদন ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে, মিলেটের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও তা খুব বেশি নয়, এবং উৎপাদনের স্থিতিশীলতাও লক্ষ্যণীয় নয়। অপরপক্ষে সহজ কারণেই চাল, গম এবং ভুট্টার উৎপাদন দিনে দিনে বৃদ্ধি পেয়েছে (Figure 2)।

Figure 1: ১৯৬১ টি ২০২০ পর্যন্ত ফসল (Cereals) অনুসারে কৃষিজমি আয়তনের হিসাব (Food and Agriculture Organisation হইতে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে Source: FAOSTAT)

Figure 2: ১৯৬১ টি ২০২০ পর্যন্ত ফসল (Cereals) অনুসারে উৎপাদনের হিসাব (Food and Agriculture Organisation হইতে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে Source: FAOSTAT

এবার মিলেটের পুষ্টিগুণ লক্ষ্য করা যাক। Table 2-র মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার মিলেটের পুষ্টি উপাদানের একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হল। সাধারণভাবে দেখা যায়মিলের চালের থেকে প্রোটিনস্নেহ জাতীয় পদার্থফাইবার এবং অ্যাশের মাত্রা প্রায় সকল ধরণের মিলেটে অধিক পরিমানে বিদ্যমান। গমের প্রোটিনের মাত্রা বেশ কয়েকটি মিলেটের যেমন কোদোকুটকিরাগি বা সাংবা থেকে অধিক থাকলেওফাইবার তুলনামূলকভাবে কম পরিমানে থাকে। ডায়েটারি ফাইবার (Dietary fiber) অধিক থাকার সুবাদে মিলেটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও (Glycemic index) কম হয়, যা পুষ্টিগুণের দৃষ্টিকোণ থেকে খুব উপকারী। তুলনামূলকভাবে চাল অধিক শর্করা জাতীয় পদার্থ ধারণ করে এবং ডায়েটারি ফাইবার থাকে অত্যন্ত কম।

Table 2: বিভিন্ন প্রকার মিলেটের পুষ্টিগুণের তালিকা (g/100g) এবং প্রতি ১০০গ্রাম খাদ্য প্রাপ্ত শক্তির পরিমান (Kcal) (Data obtained from Nutritive value of Indian Foods, National Institute of Nutrition, Hyderabad, 2007; Source: Rao et al., 2016)

Millet

C

P

F

CF

M

E

Barnyard millet (সাংবা)

65.5

6.2

2.2

9.8

4.4

307

Finger millet (রাগি)

72.0

7.3

1.3

3.6

2.7

328

Foxtail millet (কাকুম)

60.9

12.3

4.3

8.0

3.3

331

Kodo millet (কোদো)

65.9

8.3

1.4

9.0

2.6

309

Little millet (কুটকি)

67.0

7.7

4.7

7.6

1.5

341

Pearl millet (বাজরা)

67.5

11.6

5.0

1.2

2.3

361

Proso millet (চিনা)

70.4

12.5

1.1

2.2

1.9

341

Sorghum (জোয়ার)

72.6

10.4

1.9

1.6

1.6

349

Rice (Raw, Milled) (চাল)

78.2

6.8

0.5

0.2

0.6

345

Wheat (Whole)(গম)

71.2

11.8

1.5

1.2

1.5

346


C= Carbohydrate, P= Protein, F= Fat, CF= Crude fiber, M= Mineral matter, E= Energy 

পুষ্টির দৃষ্টিকোণ থেকে যে সকল খনিজ (Minerals) আবশ্যক সেগুলি প্রায় সকল প্রকার মিলেটে বিদ্যমান এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চালের থেকে তুলনামূলকভাবে অধিক (Table 3)। যেমন রাগি অধিক পরিমানে ক্যালশিয়াম ধারণ করে যার মাত্রা ৩৪৪ মিলিগ্রাম প্রতি ১০০ গ্রাম রাগিতেযেখানে প্রতি ১০০ গ্রাম চালে মাত্র ১০ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম থাকে।  একইভাবে ফসফরাসম্যাগনেসিয়ামপটাশিয়াম ইত্যাদির মাত্রাও তুলনামূলকভাবে অধিক থাকায় রাগির পুষ্টিগুণ অধিক। কুটকিবাজরাসাংবা ইত্যাদি মিলেটে লোহার পরিমান অনেক বেশি থাকেখাদ্য হিসেবে যা গ্রহণ করলে লোহার অভাবে যে এনিমিয়া হয়যার প্রাবল্য দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারতবর্ষে বিশেষত মহিলাদের মধ্যে অধিক প্রকটতার প্রকোপ কমানো যেতে পারে।

Table 3: বিভিন্ন প্রকার মিলেটে খনিজের পরিমান (mg/100g) (Data obtained from Nutritive value of Indian Foods, National Institute of Nutrition, Hyderabad, 2007; Source: Rao et al., 2016)

Millet

Ca

P

Mg

K

Na

Fe

Cu

Mn

Zn

Barnyard millet (সাংবা)

20

280

82

--

--

5.0

0.60

0.96

3.0

Finger millet (রাগি)

344

283

137

408

11.0

3.9

0.47

5.49

2.3

Foxtail millet (কাকুম)

31

290

81

250

4.6

2.8

1.40

0.60

2.4

Kodo millet (কোদো)

27

188

147

144

4.6

0.5

1.60

1.10

0.7

Little millet (কুটকি)

17

220

133

129

8.1

9.3

1.00

0.68

3.7

Pearl millet (বাজরা)

42

296

137

307

10.9

8.0

1.06

1.15

3.1

Proso millet (চিনা)

14

206

153

113

8.2

0.8

1.60

0.60

1.4

Sorghum (জোয়ার)

25

222

171

131

7.3

4.1

0.46

0.78

1.6

Rice (Raw, Milled) (চাল)

10

160

90

--

--

0.7

0.14

0.59

1.4

Wheat (Whole) (গম)

41

306

138

284

17.1

5.3

0.68

2.29

2.7


Ca= ক্যালশিয়াম (Calcium), P= ফসফরাস (Phosphorus), Mg= ম্যাগনেশিয়াম (Magnesium), K= পটাশিয়াম (Potassium), Na= সোডিয়াম (Sodium), Fe= লোহা (Iron), Cu= তামা (Copper), Mn= ম্যাঙ্গানিজ (Manganese), Zn= দস্তা (Zinc)

ভিটামিনের দিক থেকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় মিলেট অধিকমাত্রায় ভিটামিন ধারণ করে থাকে (Table 4)। যেমন জোয়ার, বাজরা, রাগি, কাকুম ভিটামিন A ধারণ করে থাকলেও, সাধারণত চালে তা অমিল, তবে গমের মধ্যে ভিটামিন A থাকে। বাজরাতে, এখানে উল্লেখিত বাকি মিলেটগুলি থেকে, তুলনামূলকভাবে বেশি মাত্রায় ভিটামিন A বর্তমান। থিয়ামিন (Thiamin) প্রায় সকল প্রকার মিলেট, চাল, ও গমে পাওয়া যায়। রাইবোফ্লাভিন (Riboflavin) চালের তুলনায় বিভিন্ন প্রকার মিলেটে অধিক মাত্রায় বর্তমান থাকে। গমে অধিক মাত্রায়  নিয়াসিন (Niacin) বর্তমান থাকলেও চাল এবং বিভিন্ন প্রকার মিলেটেও তা বিদ্যমান। ফলিক অ্যাসিডও (Folic acid) মিলেট যথা বাজরা, কোদো, জোয়ার, রাগি, কুটকি ইত্যাদিতে অধিক পরিমানে পাওয়া যায়। গমে ফলিক অ্যাসিড বেশ অধিক মাত্রায় থাকলেও চালের মধ্যে তার পরিমান বেশ কম। 

Table 4: বিভিন্ন প্রকার মিলেট থেকে প্রাপ্ত ভিটামিনের পরিমান (mg/100g; for carotene an folic acid: µg/100g ) (Data obtained from Nutritive value of Indian Foods, National Institute of Nutrition, Hyderabad, 2007; Source: Rao et al., 2016)
Vitamin A= ক্যারোটিন (Carotene), Vitamin B1= থিয়ামিন (Thiamin), Vitamin B2= রাইবোফ্লাভিন (Riboflavin), Vitamin B3= নিয়াসিন (Niacin), Vitamin B5= প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (Pantothenic acid), Vitamin B6= পাইরিডক্সিন (Pyridoxine), Vitamin B9= ফলিক অ্যাসিড (Folic acid), Vitamin E = টোকোফেরোল (Tocopherol)

সুতরাং পুষ্টিগুণের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে সহজেই বোঝা যায় মিলেট খুব উপকারী। প্রফেসর স্বামীনাথন (Professor M.S. Swaminathan) যথার্থই পরামর্শ দিয়েছেন  মিলেটকে, সাধারণভাবে যা 'Coarse grain' বলে পরিচিত, 'Nutririous millets' বলাটাই অধিক উপযোগী (Ravi et al., 2010)। আমরা সহজেই দৈনন্দিন আহারের তালিকাটিকে একটু প্রসারিত করতেই পারি, সেখানে থাকুক জোয়ার, বাজরা, রাগি ইত্যাদি মিলেট, এতে আহারের সামগ্রিক পুষ্টির মানও উন্নত হবে আবার কম ব্যবহৃত বা উপেক্ষিত হতে হতে এই উন্নত গুণমানসম্পন্ন মিলেটগুলিও হারিয়ে যাবে না।  

তথ্য সহায়তা (Reference)

Guha, R. 1996. Savaging the civilised Verrier Elwin and the tribal question in late colonial India. Economic and Political Weekly 31. https://www.jstor.org/stable/4404559 

FAO events, International Year of Millets 2023: Building momentum for the year. 
https://www.fao.org/new-york/events/detail/en/c/1473311/#:~:text=Join%20us%2C%20as%20we%20commemorate,the%20International%20Year%20of%20Millets., accessed 10th May 2022.

Pokharia, A.K.; Kharakwal, J.S.; Srivastava, A. 2014. Archaeobotanical evidence of millets in the Indian subcontinent with some observations on their role in the Indus civilization. Journal of Archeological Science 42: 442-455. https://doi.org/10.1016/j.jas.2013.11.029 

Rao, B.D.; Bhat, B.V.; Tonapi, V.A. 2018. Nutricereals for Nutritional Security. Strategies for mainstreaming millets for prosperous farming and healthy society. ICAR- Indian Institute of Millets Research, Hyderabad, India. 164P.

Rao, B.D.; Vishala, A.D.; Christina, G.D.A.; Tonapi, V.A. 2016. Millet Recipes- A Healthy Choice by ICAR-Indian Institute of Millets Research, Hyderabad, India.

Ravi, S.B.; Swain, S.; Sengotuvel, D.; Parida, N.R. 2010. Promoting nutritious millets for enhancing income and improved nutrition: A case study from Tamil Nadu and Orissa. In: Mal, B.; Padulosi, S.; Ravi, S.B. (Eds.), Minor Millets in South Asia: Learnings from IFAD-NUS Project in India and Nepal. Biodiversity International, Maccarese, Rome, Italy and M.S. Swaminathan Research Foundation, Chennai, India. 185P. 

Nelson, A.R.L.E.; Ravichandran, K.; Antony, U. 2019. The impact of the green revolution on indigenous crops of India. Journal of Ethnic Foods 6: 8. https://doi.org/10.1186/s42779-019-0011-9 

Weber, S.; Kashyap, A. 2016. The vanishing millets of the Indus civilization. Archeological and Anthropological Sciences 8: 9-15. https://www.doi.org/10.1007/s12520-013-0143-6 


রাজমহল: পর্ব-২ (Rajmahal: Part-2)

সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)  রাজমহল: পর্ব-১  -র পর- ঘুম ভাঙলো প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের শব্দে। বাইরে তখন খুবই কুয়াশা, হোটেলের ঘরের কাঁচের ...